Join Telegram Join Facebook বাংলা রচনা
সাহিত্যের ইতিহাস সাজেশান Question-Paper
WBCS স্কুল নোটস ইতিহাস

বাংলা ছন্দ-পরিভাষা, NET SET Bengali , Bangla Chhondo Paribhasa

বাংলা ছন্দের পঠনে প্রথমেই যেটি আমাদের জানার প্রয়োজন পড়ে সেটি হল--ছন্দের পরিভাষা। এগুলি জানা থাকলে ছন্দের বৈশিষ্ট্য ও ছন্দের প্রকৃতি সহজেই বুঝতে পারা যায়। পাশাপাশি ছন্দ নির্ণয়ে এগুলির অপরিহার্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। বাংলা ছন্দ পরিভাষা নিয়ে একটি লেখা এখানে দেওয়া হল।

বাংলা ছন্দ-পরিভাষা, NET SET Bengali , Bangla Chhondo Paribhasa


বাংলা ছন্দের আলোচনায় বিশেষ উপযোগী পারিভাষিক শব্দগুলির অতিসংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।


অক্ষর


এই বিভিন্নার্থক শব্দটিকে ছন্দের আলোচনায় কেউ কেউ সিলেব্‌ল্‌ (Syllable, দল) অর্থে প্রয়োগ করেছেন। তাতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই অক্ষরকে বর্ণের সমার্থক রূপেই গ্রহণীয়, ‘সিলেব্‌ল্‌’ অর্থে নয়। ‘সিলেব্‌ল্‌’ অর্থে দল’ শব্দটির ব্যবহার বহুল পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত।


অক্ষরবৃত্ত


অক্ষর সংখ্যায় নির্দিষ্ট ও বিশেষিত ছন্দরীতিকে ‘অক্ষরবৃত্ত’ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু অক্ষর শব্দটি অনিশ্চিতার্থক হওয়ায় ‘অক্ষরবৃত্ত’ও সুনিশ্চিতার্থক হতে পারে। তাছাড়া এ বিষয়ে ছান্দসিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশই একমত যে, অক্ষর গণনার ভিত্তিতে কোনো ছন্দ রচিত হতে পারে না। এই ছন্দরীতিটি অর্থাৎ মিশ্রবৃত্ত একটি মিশ্রপ্রকৃতির ছন্দ, অক্ষরগুণে সে প্রকৃতিকে পাওয়া সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আমাদের স্বরবর্ণগুলো জীবধর্মী, ব্যবহারের প্রয়োজনে একটা সীমার মধ্যে তাদের সংকোচন-প্রসারণ চলে।… এই জন্যেই অক্ষরের সংখ্যা গণনা করে ছন্দের ধ্বনি মাত্রা গণনা বাংলা ছন্দে চলে না [‘ছন্দ' গ্রন্থ (১৯৭৬), পৃ. ১০২]। লক্ষণীয় নামটি বাংলায় প্রচলিত করেন সর্বপ্রথম প্রবোধচন্দ্র সেন। কিন্তু ব্যবহারের নানা অনুপযোগিতায় অক্ষরবৃত্ত পরিহার করে তিনি যৌগিক ও ‘বিশিষ্ট কলামাত্রিক’ নামটি গ্রহণ করেন। স্পষ্টার্থক না হওয়ায় পরে তিনি সেটিও বর্জন করেন। অবশেষে ‘মিশ্রকলাবৃত্ত’ বা সংক্ষেপে ‘মিশ্রবৃত্ত’ গ্রহণ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সাধন করেন। উচ্চারণের কারণে এ রীতির ছন্দে ধ্বনি-বিন্যাস প্রণালীটি মিশ্রপ্রকৃতির হওয়ায়-- মিশ্রবৃত্ত নামটিই সংগত, অক্ষরবৃত্ত নয়।


অণুযতি বা দলযতি


মুক্ত-রুন্ধ নির্বিশেষে প্রত্যেক দলের শেষে অবস্থিত অতি ক্ষীণ যতিটিকে বলা হয় ‘অণুযতি’ বা 'দলযতি।


অতিপর্ব—(Anacrusis)


কোনো ছন্দ পংক্তির পূর্বে স্থাপিত প্রস্বরহীন অর্থবহ ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছকে অতিপর্ব বলা হয়। অতিপর্ব কবিতা পাঠে বা আবৃত্তিতে ধ্বনিতরঙ্গের সৃষ্টি করে। কখনো কখনো একই উদ্দেশ্যে অতিপর্ব পংক্তির মাঝখানেও স্থান পায়। তখন তাকে বলা যায় ‘অভ্যন্তর অতিপর্ব’। সুতরাং পংক্তির পূর্বের অতিপর্বকে ‘আদ্য অতিপর্ব বলা চলে।


অমিতাক্ষর ছন্দ


মধুসূদন প্রবর্তিত ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’কে অমূল্যধন বলেছেন ‘অমিতাক্ষর’। কিন্তু অক্ষরের ‘অমিত’ হবার কোনো কারণ না থাকায় নামটি গ্রাহ্য হয়নি।


অমিত্রাক্ষর


মধুসূদন ইংরেজি Blank-verse-এর অনুসরণে বাংলায় যে নতুন ছন্দ প্রবর্তন করলেন তার নাম দিলেন ‘অমিত্রাক্ষর’। তা হল মিলহীন মুক্ত গতি পয়ার বন্ধ। অর্থের দিক থেকে অস্বীকার্য হলেও রূঢ়ার্থে নামটি সচল। এটির অর্থবহ নাম দিয়েছেন প্রবোধচন্দ্র সেন ‘অমিলপ্রবহমান পয়ার’। পংক্তি প্রান্তে মিল রেখে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন— ‘সমিলপ্রবহমান পয়ার’, অমিত্রাক্ষরের প্রকৃত পরিচয় তার প্রবহমানতা (enjambment), যা মিলের অভাব নয়।


অর্ধযতি বা পদযতি


ছন্দ পংক্তির প্রধান বিভাগ পদের পরবর্তী যতি বা ধ্বনি বিরতির নাম ‘অর্ধযতি’। ‘অর্ধযতি’কে পদযতি’ও বলা যায়, কারণ এটি পদের সীমানাসূচক।


অর্ধযমক


ভিন্নার্থক শব্দ বা শব্দগুচ্ছের উচ্চারণগত ধ্বনিসাম্যকে যমক বলা হয়। আর ধ্বনিসাম্য থাকলেও একটি শব্দ বা শব্দাংশের নিরর্থকতা থাকলে তাকে অর্ধযমক বা নিরর্থক যমক বলা হয়।


আদ্যমিল


মিল সাধারণত পংক্তি শেষে থাকে। তবে পর্বে-পর্বে ও পদে পদে মিল থাকলে তাকে আদ্য মিল বলা চলে। কারণ তার অবস্থান পংক্তির আদিতে, অন্তে নয়।


আদ্যারীতি


অক্ষরবৃত্ত বা মিশ্রবৃত্ত ছন্দকে সত্যেন্দ্রনাথ নাম দিয়েছেন আদ্যা। তবে ছন্দ-আলোচনায় এটি গৃহীত হয়নি।


উপপর্ব—উপযতি


সবরকম পর্বই আমাদের মুখে উচ্চারণের সময় দুই বা তিন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। পর্বের এই উচ্চারণ বিভাগের নাম ‘উপপর্ব'। প্রত্যেক পর্বের প্রথম কখনো বা দ্বিতীয় উপপর্বের পরে যে উচ্চারণ বিরতি ঘটে তার নাম ‘উপযতি’। মনে রাখা দরকার শেয-উপপর্বের পর পর্বতি কখনো বা পদযতি পড়ে।


উপযমক


যদি কোনো ক্ষেত্রে দুই শব্দের, শব্দাংশের বা শব্দগুচ্ছের প্রথম ব্যঞ্জনটি বাদে বাকি স্বর ও ব্যঞ্জনের শ্রুতরূপ যথাক্রমে অভিন্ন বা প্রায় অভিন্ন হয়, তবে ওই দুই অংশের পরিচয় হয় ‘উপযমক’ নামে। এই উপযমকেরই প্রচলিত নাম মিল। ওড়িয়া ভাষায় বলা হয় ‘উপধামেল’।


একপদী


যে ছন্দপংক্তি একটি বা দুটি লঘুযতি দ্বারা দুই বা তিন পর্বে বিভক্ত, কিন্তু কোনো অর্ধযতির দ্বারা বিভক্ত নয়, তাকে একপদী বলে। একপদীতে অর্ধযতি বা পদযতি থাকে না।


কলা


একটি হ্রস্বস্বর বা হ্রস্ব-স্বরাস্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সমপরিমাণ ধ্বনিকে ছন্দ পরিভাষায় কলা (mora) বলে। অপ্রসারিত মুক্ত ও রুদ্ধদলের সমপরিমাণ ধ্বনিরও পারিভাষিক নাম ‘কলা’। সাধারণভাবে ‘কলা’ বললে অংশ বোঝালেও ছন্দের ক্ষেত্রে mora-ই বোঝায়।


কলাবৃত্তরীতি


যে রীতিতে বাংলা ছন্দের ধ্বনি নিরূপিত হয় কলাসংখ্যার হিসাবে তার নাম ‘কলাবৃত্ত’। এ রীতিতে কলাই ছন্দের মাত্রা রূপে গণ্য। কলাসংখ্যাত, কলামাত্রক, সরল-কলাবৃত্ত (কলাবৃত্ত) এই নাম তিনটির অর্থ এক।


কলামাত্রা


কলাসংখ্যাত ছন্দের মাত্রা (Unit of measure)-কে বলা যায় কলামাত্রা। এই ছন্দে এক-একটি কলাই এক-একটি মাত্রা। পর্ব, পদ ও পংত্তির কলাসংখ্যাই মাত্রা সংখ্যা।


খণ্ড বর্ণ


স্বতন্ত্রভাবে যে স্বর ও ব্যঞ্জনের উচ্চারণ সম্ভব নয় তাকে ‘খণ্ডবর্ণ’ বলা যায়। এরূপ স্বরবর্ণ ‘খণ্ডস্বর’ এবং ব্যঞ্জন ‘খণ্ড ব্যঞ্জন’ রূপে গণ্য।


গুরু-লঘু


সংস্কৃত ও প্রাকৃত পরিভাষায় একমাত্রক দলকে হ্রস্ব এবং দ্বি-মাত্রক দলকে দীর্ঘ বলা হয়। আবার দল দুটিকে যথাক্রমে ‘লঘু’ ও ‘গুরু’ বলেও উল্লেখ করা হয়। হ্রস্ব-দীর্ঘ সূচিত করে দলের উচ্চারণগত প্রসার বা ব্যাপ্তি আর লঘু-গুরু দ্বারা বোঝায় ধ্বনির ভর বা ওজন গত তারতম্য।


গৌড়ীয় গায়ত্রী


বৈদিক ‘গায়ত্রী’ ছন্দের অনুরূপ সত্যেন্দ্রনাথ ‘গৌড়ী গায়ত্রী’ ছন্দটি প্রবর্তন করেন। এটি একটি ছন্দ-বন্ধ।


ঘাতপ্রস্বর


শব্দের বা পর্বের প্রথম দলের উপর যে উচ্চারণগত ঝোঁক পড়ে, তা হল ঘাতপ্রস্বর (stress accent)।


চরণ


ছন্দগত পূর্ণযতির বিভাগ, যাকে ছন্দ-পংক্তি বা সংক্ষেপে পংক্তি বলা হয়, তাকেই অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় বলেছেন—‘চরণ’। সংস্কৃত প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রে পদ, পাদ বা চরণ সমার্থক। বাংলায় ‘চরণ’ শব্দের প্রয়োগ থাকলেও পরিমাণে কম। সাধারণভাবে কবিতার লাইন বোঝাবার জন্য ‘চরণ’ চলতে পারে। কিন্তু ছন্দ-পংক্তিরূপে ব্যবহার না করাই ভালো। তাতে ছন্দ-পংক্তির আকৃতি-প্রকৃতি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। চরণ ও ছত্র সমার্থক, অপারিভাষিক।


চিত্রারীতি


লোকসাহিত্যে ও চলতি ভাষায় রচিত ছন্দরীতিকে সত্যেন্দ্রনাথ নাম দিয়েছেন ‘চিত্রা'। এই রীতিটির সাম্প্রতিক নাম 'দলবৃত্ত’।


চৌপদী


যে ছন্দ পংক্তি, তিনটি পদযতি দিয়ে চারভাগে বিভক্ত তারই নাম ‘চৌপদী’ অর্থাৎ চার পদের সমাহার।


ছন্দ


সাধারণভাবে ছন্দ শব্দটি নানার্থক। যেমন গড়ন বা ভঙ্গি-- যেমন মুখের ছন্দ, চলার ছন্দ। পদ্যরচনার প্রণালী—সংস্কৃত, প্রাকৃত বা বাংলা, হিন্দি ছন্দ। ছন্দের রীতি বা বন্ধ। কোনো ঘটনা বা ক্রিয়ার নির্দিষ্ট সময়ান্তরে পুনরাবৃত্তি। হৃৎপিণ্ডের ছন্দ, ঘড়ির দোলকের ছন্দ, নিশ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ, পদ্য রচনার বহিরাকৃতি বা রূপ। যেমন পয়ার, ত্রিপদী, অমিত্রাক্ষর, মুক্তক প্রভৃতি। এসবের অন্য নাম ছন্দবন্ধ। ছন্দবন্ধকেও অনেক সময় ‘ছন্দ’ বলা হয়ে থাকে, যেমন পয়ার ছন্দ, ত্রিপদী ছন্দ প্রভৃতি।


আবার ব্যাপক অর্থে রীতি, বন্ধ ও স্পন্দন তিনের সমষ্টিকে ছন্দ নামে অভিহিত করা হয়। ছন্দ-শাস্ত্রে এই তিনের সংজ্ঞা ও পরিচয় সুনির্দিষ্ট। কিন্তু সাধারণ শিথিল প্রয়োগে এই তিনের যে কোনো একটিকেও বোঝায়। তবে ছন্দরীতি, ছন্দবদ্ধ এবং ছন্দস্পন্দ-বোধক নির্দিষ্ট প্রয়োগই বাঞ্ছনীয়। যেমন দলবৃত্ত রীতির ছন্দ, ত্রিপদী বা চৌপদী বন্ধ।


ছন্দ সন্ধি--(metrical liaison)


ছন্দের মাত্রা সমতা রক্ষার জন্য কখনো কখনো দুটি সন্নিহিত কর্ণ (স্বর বা ব্যঞ্জন) আমাদের উচ্চারণে পরস্পর যুক্ত ও সংকুচিত হয়ে যায়। দুই বর্ণের বা বর্ণধ্বনির এই সংযোগ বা মিলনকে বলা যায় ছন্দসন্ধি। এর অস্তিত্ব কেবল উচ্চারণে ও শ্রবণে, তাই একে ‘শ্রুতিসন্ধি'ও বলা যায়।


ছেদ


অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় ভাবযতির বদলে 'ছেদ' ব্যবহারের পক্ষপাতি ছিলেন। সংস্কৃত ও প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রে ছেদ ও যতি সমার্থক। কিন্তু তিনি ছন্দগত বিরামকে 'যতি’ এবং অর্থগত বিরামকে ‘বিচ্ছেদ যতি’ বা ‘ছেদ’ বলেছেন, আবার ভাবযতিও বলেছেন।


তানপ্রধান


বাংলা কাব্যের সর্বাপেক্ষা প্রচলিত সনাতন ছন্দরীতিটিকে অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় বলেছেন ‘তানপ্রধান’। এ রীতিটি এখন ‘মিশ্রবৃত্ত’ নামে সুপরিচিত।


তাল


ছন্দবন্ধ ধ্বনিপ্রবাহের তরঙ্গভঙ্গির প্রচলিত নাম তাল। এই তালই ছন্দশাস্ত্রের পরিভাষায় স্পন্দ (rhyme)।


ত্রিপদী


যে ছন্দপংক্তি দুটি পদযতি দিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত তাকে বলা হয় ত্রিপদী। ত্রিপদী সাধারণত দুরকমের ছয়-ছয়-আট মাত্রার লঘু ত্রিপদী এবং আট-আট-দশ মাত্রার দীর্ঘত্রিপদী। ত্রিপদীতে মাত্রা বিন্যাসের অন্যক্রমও দেখা যায়।


দল—(Syllable)


বাগযন্ত্রের এক প্রয়াসে উচ্চারিত শব্দের ধ্বনিখণ্ডের নাম দল। ছন্দের আলোচনায় পর্বের অংশ বা উপপর্বের নির্দেশক ক্ষীণতম যতি অর্থাৎ অণুযতি-সূচক ধ্বনি বিভাগের নাম দল। এক প্রযত্ন-উচ্চারিত শব্দ বা শব্দাংশের নাম দল। দল দুই প্রকারের-- খণ্ডবর্ণ-আশ্রিত দল রুদ্ধদল (closed syllable) এবং খণ্ডবর্ণহীন স্বতন্ত্র দল মুক্তদল (open syllable)।


দলবৃত্ত


বাংলা ছন্দের যে রীতিতে ধ্বনি নিরূপিত হয় দলসংখ্যার হিসাবে তার নাম দলবৃত্ত (Syllabic style)। দল সংখ্যাত, দলমাত্রক ও দলবৃত্ত— এই তিন নামেও রীতিটি পরিচিত।


দলমাত্রা


দলসংখ্যাত ছন্দের দলই হল মাত্রা। দলকে একক ধরে ছন্দের ধ্বনি মাপা হলে সেই একককে 'দলমাত্রা' বলে।


দলযতি


উচ্চারণের সময় প্রত্যেক দলের শেষে যে অতি সামান্য অতি ক্ষীণ বিরতি ঘটে তারই নাম দলযতি বা অনুযতি।


দ্বিপদী


যে ছন্দপংক্তি একটি মাত্র অর্ধযতি দ্বারা দুইভাগে বা দুই পদে বিভক্ত তাকে দ্বিপদী বলে।


ধ্বনিপ্রধান ছন্দ


রুদ্ধদলকে দীর্ঘ এবং মুক্ত দলকে হ্রস্ব ধরে যে ছন্দ রীতির পরিচয় পাওয়া যায়—অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় তাকেই ধ্বনিপ্রধান ছন্দ বলেছেন। পূর্বের মাত্রাবৃত্ত এবং আধুনিক কলাবৃত্তকেই ধ্বনিপ্রধান বলা হয়েছে।


পংক্তি


পদ্য রচনায় পূর্ণযতির দ্বারা নির্দিষ্ট ছন্দ বিভাগকে পংক্তি বলা হয়। অর্থাৎ ছন্দের পূর্ণ যতি বিভাগের পারিভাষিক নাম পংক্তি। বলাই বাহুল্য এই পংক্তি বিভাগকে পদ বা চরণ বলা সমীচীন নয়। পংক্তি বিভিন্ন রকমের হয়--তার মধ্যে একপদী, দ্বিপদী (পয়ার), ত্রিপদী ও চৌপদী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


পংক্তিযতি


পদ্য রচনার বৃহত্তম বিভাগ অর্থাৎ পংক্তির পরে যে বৃহৎ বিরতি বা বড়ো যতি, তাকে বলা হয় পংক্তি যতি বা 'পূর্ণযতি’।


পদ


অর্ধযতি দ্বারা খণ্ডিত পংক্তি বিভাগের পারিভাষিক নাম পদ (clause)। ছন্দের রচনায় পরে গুরুত্ব বিশেষভাবে স্বীকার্য। পদকে অস্বীকার করে বাংলা ছন্দের বৈজ্ঞানিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।


পদযতি


পংক্তির পদবিভাগ সূচক যতির নাম পদযতি বা অর্ধযতি।


পয়ার


যে দ্বিপদী ছন্দবন্ধের দুই পদে যথাক্রমে আট ও ছয় মাত্রা থাকে তাকেই পয়ার বলা হয়। পয়ার একটি নির্দিষ্ট আকৃতির দ্বিপদী ছন্দবন্ধ। ছন্দরীতি কদাপি নয়। মিশ্রবৃত্ত, কলাবৃত্ত ও দলবৃত্ত তিন রীতিতেই এই পয়ারবন্ধ রচিত হয়।


পর্ব


লঘুযতি দ্বারা নির্দিষ্ট পদ-বিভাগের পারিভাষিক নাম পর্ব। দলবৃত্ত ও কলাবৃত্ত রীতিতে পর্বভাগ ও পর্বযতির অবস্থান সুস্পষ্ট থাকে। কিন্তু মিশ্রবৃত্ত রীতিতে সবসময় তা সুব্যক্ত না থাকায়, কেউ কেউ ভাবেন এ রীতিতে পর্ববিভাগ হয় না, পদবিভাগই তার প্রধান অবলম্বন। অথবা এ রীতিতে ৬, ৮ ও ১০ মাত্রার পর্ব গঠিত হয়। বলাই বাহুল্য এই দুই মনোভাবের কোনোটিই যথার্থ নয়। যতিলোপ বা লুপ্তযতির বিষয়ে অবহিত না হওয়ায়— এই সিদ্ধান্ত সম্ভব। 

চার মাত্রার পর্বের পর লঘুযতি এবং আটমাত্রার পদের পর অর্ধযতির লোপ ঘটলে, একটানা উচ্চারণ সম্ভব হয় আর যুক্তপর্বিক পদ বা যুক্তপদিক পংক্তি রূপ নেয়। মিশ্রবুত্তেই যতিলোপ বেশি ঘটে। ঘন ঘন যতিলোপ ঘটলে মনে হয় পর্ব বিভাগ নেই। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার দলবৃত্ত ও মিশ্রবৃত্তে পর্বের আয়তন চার কলা ও চার দল মাত্রার আর কলাবৃত্তে পর্বের আয়তন চার, পাঁচ, ছয় ও সাত মাত্রার। আট মাত্রার পর্ব কোনো রীতিতেই স্বাভাবিক নয় অর্থাৎ হয় না। তা সহজ উচ্চারণসম্মতও নয়।


পর্বযতি


ছন্দবদ্ধ পদের পর্ব বিভাগের পরিচায়ক হল পর্বযতি, যার অন্য নাম লঘুযতি।


পর্বাঙ্গ


পর্বের উপবিভাগ বা উপপর্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘বাংলা ছন্দের মূল সূত্র' গ্রন্থে। বলা হয়েছে পর্ব ছন্দের অণু এবং পর্বাঙ্গ ছন্দের পরমাণু। বক্তব্যটি সহজগ্রাহ্য নয়। একাধিক দল নিয়ে গঠিত পর্বাঙ্গ বা উপপর্ব যদি পরমাণু হয়, তো দল কী ? আসলে পর্বাঙ্গের ধারণাটি নিচ্ছিদ্র নয়।


----------------------------------------------


-- ক্রমশ প্রকাশ্য --


----------------------------------------------



More Post Link

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url