ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতা, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, Class 11
Last Updated on : June 9, 2024
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতা : প্রিয় একাদশের শিক্ষার্থীরা, আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো একাদশ বাংলা কবিতা “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর”, কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত || ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 XI Bengali Question and Answer | 11th Bengali Examination – একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম সেমেস্টার। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে |
তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমেস্টার বাংলা কবিতা “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে । আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতা, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমেস্টার কবিতা
Iswar Chandra Vidyasagar by Madhusudan Dutta, Class 11 XI Bengali 1st Semester Poem
তোমাদের সুবিধার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতাটি এখানে সম্পূর্ণ দেওয়া হল
মূল কবিতা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
৮৬ সংখ্যক সনেট
বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু! – উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্ব্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ-সদনে!–
দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী;
যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল, দাসরূপ ধরি;
পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে;
দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে!
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতার উৎস
মাইকেল মধুসূদন দত্তের “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” ১২৭৩ বঙ্গাব্দ (১৮৬৬ খ্রি.)
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
প্রথম সংস্করণে “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” ৮৪ সংখ্যক সনেট। কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণে (১৩৭৫ বংগাব্দ/১৮৬৯ খ্রি.) এটি ৮৬ সংখ্যক সনেটরূপে প্রকাশিত হয়।
“চতুর্দশপদী কবিতাবলী”-তে বিদ্যাসাগরকে উদ্দেশ্যে করে কবি দুটি সনেট লিখেছেন,
- বঙ্গদেশে এক মান্য বন্ধুর উপলক্ষে (৪৬ নং)
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (৮৬ নং)
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতার সারাংশ বা বিষয়বস্তু
অষ্টক (Octave)
মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ কবিতাটির মধ্যে দিয়ে বিদ্যাসাগরের চারিত্রিক গুণাবলী পরিচয় দিয়েছেন এবং বিদ্যাসাগরের প্রতি তাঁর অসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মধুকবি ঈশ্বরচন্দ্রকে ‘বিদ্যার সাগর’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতো পণ্ডিত, জ্ঞানী শুধু বিদ্যার সাগরই নন, তিনি করুণার সাগরও। যে দীনদরিদ্র সেই-ই মনে মনে জানে এই কথা যে, তিনি আসলে দীন-দরিদ্রের পরম বন্ধু, পরম আশ্রয়। কারণ তাঁর করুণাধারার স্পর্শে তার জীবন ধন্য হয়ে গেছে। যেমন ধন্য হয়ে গেছে স্বয়ং মাইকেল মধুসূদনের জীবনও।
বিদ্যাসাগর সোনার পাহাড়ের মতো উজ্জ্বল, স্বর্ণাভ অমলিন উজ্জ্বল কিরণে তিনি উদ্ভাসিত। কেউ যদি ভাগ্যবলে সেই মহা পর্বতস্বরূপ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাক্ষাৎ পায় আর আশ্রয় পেয়ে থাকে তাঁর সোনার পদকমলে, তবে সে-ই জানবে কত গুণবান তিনি। পর্বতশ্রেষ্ঠ হিমালয়ের মতো তাঁর উত্তুঙ্গ অবদান। তাঁর ঘরে, তাঁর সুখ-আশ্রয়ে পৌঁছোলে যে আন্তরিক সেবা, আতিথেয়তা এবং সাহায্য পাওয়া যায়, তা কথায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
ষটক (Sestet)
নদী যেমন করে অকাতরে জল দান করে, নির্মল হৃদয়ে দাসীর মতো সেবাব্রতী হয়ে তিনিও তেমন করেই মানুষের নিঃস্বার্থ উপকার করে চলেন। দীর্ঘতরু যেমন অত্যন্ত আদর ও ভালোবাসায় মানুষকে অমৃতফল দান করে, ফুলের সুগন্ধে চারদিক ভরিয়ে তোলে, ঠিক তেমন-ই বিদ্যাসাগরও তাঁর সেবামূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণসাধন করেন।
গাছেদের যেমন উপকারের জন্য কোনো অহংকার নেই, তারা যেমন বিনীত, বিদ্যাসাগরও ঠিক তেমনই। তিনিও ফল-ফুলে পরিপূর্ণ তরুর মতো মানুষের উপকার করে চলেন। বনেশ্বরী অর্থাৎ বনের বিশালাকার বৃক্ষ দিনের খরতাপে শীতল ছায়া দান করে আর রাতে পশুপাখির শান্তির ঘুমের মাধ্যমে ক্লান্তি দূর করার আয়োজন করে। বিদ্যাসাগরও তেমনই, মানবসমাজকে নানা তাপ-উত্তাপ, গ্লানি থেকে মুক্ত করে শান্তির, সুখের বিশ্রাম ও ঘুমের আশ্বাস দেন। তিনি যেন একই দেহে বিদ্যাসাগর এবং করুণাসাগর। হিমাদ্রির মত সুউচ্চ অথচ বিনীত। অপিচ, হিমাদ্রি চরণারবৃন্দে যারা আশ্রয় পেয়েছে, তারা সুখ-শান্তির নীড় খুঁজে পেয়েছে।
অর্থাৎ মধুকবি যুগপৎ ঈশ্বরচন্দ্রের বিদ্যা-গরিমা দূর থেকে এবং দয়া-করুণা নিকটে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন।
অতিরিক্ত কিছু বক্তব্য
সূচনা
উনবিংশ শতকের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কবি-নাট্যকার হিসেবে যাঁর নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয় তিনি অবশ্যই মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সাহিত্যিক মহাকাব্য রচনা হোক কিংবা নাটক, সবেতেই তিনি বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে পথিকৃতের আসন ছিনিয়ে নিয়েছেন। আলোচ্য “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” কবিতাটি একটি সনেট জাতীয় কবিতা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বাংলা ভাষায় প্রকৃত সনেটের রচয়িতা তিনিই। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি, নবজাগরণের কবি-পুরোধা মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতাটি সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো।
কবি-কথা
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম ১৮২৪ খ্রি. ২৫ জানুয়ারি। কবির মৃত্যু হয় ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন। ২০২৪ সালে কবির জন্মের দ্বিশতবর্ষ পূরণ হলো। দীর্ঘ ২০০ বছর পরেও যখন কবির চর্চা আমাদের মধ্যে সতত প্রবহমান, সুতরাং কবির প্রতিভা নিয়ে আমাদের সন্দিহানের কোনো প্রশ্নও ওঠে না। বর্তমান বাংলাদেশের যশোরে (সাগরদাঁড়িতে) কবির জন্ম এক জমিদার বংশে হলেও কবি বংশের আভিজাত্য পেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করায় পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। রেবেকা এবং হেনরিয়েটা নামে দুই নারীকে তিনি বিবাহ করেছিলেন। শিক্ষকতা, পত্রিকা-সম্পাদনা, কেরানি, আইন ব্যবসায়, অনুবাদ বিভাগের পরীক্ষকের মতো নানা পেশা তিনি গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোনো বৃত্তিই তাঁকে বেশিদিন টানতে পারেনি। কারণ কাব্য-সরস্বতীর অকুন্ঠ আশীর্বাদ তাঁর কলমে নিয়মিত বর্ষিত হয়েছে। ফলে কাব্যচর্চা থেকে নিজেকে নিরত করতে পারেননি।
মধুসূদন দত্ত ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
ওকালতি পড়ার জন্য মাইকেল ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন ১৮৬২ সালের দিকে। কিছুদিন পরেই স্ত্রী-সন্তান সেখানে উপস্থিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই অমিতব্যয়ী মধুসূদনের আর্থিক অবস্থা পড়তি দিকে যায়। তখনই বিদ্যাসাগরকে তিনি চিঠি লিখে অর্থ প্রার্থনা করেন। এমন অবস্থা বিবেচনা করে বিদ্যাসাগর মধুসূদনকে অর্থ পাঠিয়ে দেন। তাছাড়া মধুকবির প্রতি বিদ্যাসাগরের প্রশ্রয় নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সে বিষয়ে মধুসূদনের নানা চিঠিপত্রে নানাস্থানে তা উল্লিখিত হয়েছে। আলোচ্য “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” সনেটটি বিদ্যাসাগরের প্রতিই যেন সেই মধুকবির অকুন্ঠ স্বীকৃতিদানের একটি প্রয়াস।