ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতার উৎস, নামকরণ, প্রকৃতি, শব্দার্থ
Last Updated on : June 8, 2024
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতা : প্রিয় একাদশের শিক্ষার্থীরা, আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো একাদশ বাংলা কবিতা “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর”, কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত || প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 XI Bengali Question and Answer | 11th Bengali Examination – একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম সেমেস্টার। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে |
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতার উৎস, নামকরণ, প্রকৃতি, শব্দার্থ
তোমাদের একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমেস্টার বাংলা কবিতা “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হবে । আমাদের আশা এই গুলি তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।
‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ কবিতার উৎস
মাইকেল মধুসূদন দত্তের “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” ১২৭৩ বঙ্গাব্দ (১৮৬৬ খ্রি.)
প্রথম সংস্করণে “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” ৮৪ সংখ্যক সনেট। কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণে (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ/১৮৬৯ খ্রি.) এটি ৮৬ সংখ্যক সনেটরূপে প্রকাশিত হয়।
“চতুর্দশপদী কবিতাবলী”-তে বিদ্যাসাগরকে উদ্দেশ্যে করে কবি দুটি সনেট লিখেছেন
- বঙ্গদেশে এক মান্য বন্ধুর উপলক্ষে (৪৬ নং)
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (৮৬ নং)
‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ কবিতার নামকরণ
সাহিত্যের নামকরণ কবি-লেখকের সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। ফলত নামকরণ পর্যালোচনায় আমাদের সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। আলোচ্য “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” সনেটটির নামকরণ সার্থক কিনা এখন বিচার্য।
কবি মধুসূদনের “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” কবিতাটি বাংলার উনিশ শতকের অনন্য ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করে রচিত। ঈশ্বরের অগাধ পাণ্ডিত্য ও অসীম করুণার যে রূপ কবি নানাভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তারই প্রকাশ পেয়েছে আলোচ্য সনেটে। হিমালয়ের অতুলন সৌন্দর্য যেমন দূর থেকে আস্বাদিত হয়, তেমনিভাবেই বিদ্যাসাগরের বিরাট পাণ্ডিত্য কবি উপলব্ধি করেছিলেন সাহিত্যপাঠ কিংবা লোকমুখে। কিন্তু বিদ্যাসাগরের মাতৃরূপের অগাধ স্নেহ লাভ করেছিলেন কবি ব্যক্তিজীবনে। ঈশ্বরচন্দ্রের হিমাদ্রিতুল্য উদারতা, দীনজনের আশ্রয় হয়ে ওঠার মধ্যে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন অপার মহিমা। সুতরাং কবিতায় ঈশ্বরচন্দ্রের ব্যক্তিত্বের বিশেষ একটি দিক প্রতিফলিত হয়েছে এবং কবিতার নামকরণ বিফলে পর্যবসিত হয়নি।
‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ কবিতার প্রকৃতি
“ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” কবিতাটি একটি সনেট। সনেট কী, এ সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। ‘সনেট’ ইতালীয় শব্দ, যার সম্পর্কে বলা হয়েছে – “A sonnet is a wave of melody” অর্থাৎ বিশেষ ছন্দোবন্ধে রচিত কবির হৃদয়ান্তর্গত ভাবোচ্ছাসের অভিব্যক্তি। সনেটে বিশেষ ছন্দোবন্ধে গঠিত কারণ এর –
ক. পঙক্তি সংখ্যা নির্দিষ্ট; সাধারণত ১৪ (চতুর্দশ) পংক্তির।
খ. প্রতি পঙক্তিতে থাকে নির্দিষ্ট ১৪ বা ১৮ বা ২২ মাত্রা।
গ. সনেট – অষ্টক, ষটক, চতুষ্ক, ত্রিপদী, দ্বিপদীতে বিভক্ত
সনেটের স্রষ্টা বলা হয় পিয়ারোভনে-কে। যদিও সনেটের প্রকৃত স্রষ্টা বলা উচিৎ ইতালির নবজাগরণের কবি পেত্রার্ক-কে।
সনেট নানাসময়ে কবিদের হাতে নানাভাবে বিবর্তিত হয়েছে। সেই অনুসারে সনেট সাধারণত তিন রীতির, যথা –
ক. পেত্রার্কীয় সনেট,
খ. শেক্সপিয়রীয় সনেট, ও
গ. ফরাসি সনেট।
বাংলা ভাষায় সনেটের জন্মদাতা অবশ্যই মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সনেটকে কবি নামকরণ দিয়েছেন “চতুর্দশপদী”। এসম্পর্কে কবি বন্ধু গৌরদাস বসাককে চিঠিতে লিখেছিলেন – “I say the sonnet চতুর্দশপদী will do wonderfully in our language”। ফ্রান্সের ভার্সাই-তে থাকার সময় কবি সনেট রচনা করেছেন। অর্থাৎ বিদেশের মাটিতেই বিদেশি ফসলের দেশীয়করণ সম্পন্ন হয়েছিল। মধুসূদনের বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম সনেট হলো “কবি মাতৃভাষা”, ১৮৬০ সালের দিকে রচিত। তবে মনে রাখ্তে হবে যে, বাংলা ভাষায় সনেট লেখার আগে মধুসূদন ছাত্রজীবনে ইংরাজি ভাষায় সনেট লিখেছিলেন। যাইহোক ১৮৬৬ সালের ১ আগস্ট “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” গ্রন্থ-আকারে প্রকাশিত হয়। এ প্রসঙ্গে উলেখ্য যে, এই কবিতাগুলি কবির শেষ জীবনের রচনা।
“ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” কবিতাটি হলো ‘পেত্রার্কীয় সনেট’-এর উদাহরণ। কবিতাটির অন্ত্যমিল এইরূপ : ক-খ, ক-খ, ক-খ, ক-খ, গ-ঘ, গ-ঘ, গ-ঘ।
‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ কবিতার শব্দার্থ
বিদ্যার সাগর = অগাধ জ্ঞান রয়েছে এমন ব্যক্তি
সিন্ধু = সাগর, সমুদ্র
দীন = দরিদ্র, গরীব
হেমাদ্রি = হেম + অদ্রি, সোনার পর্বত, সুমেরু পর্বত
হেম-কান্তি = সোনার মত রূপ
অম্লান = যা বিবর্ণ বা ফ্যাকাশে নয়, উজ্জ্বল
মহাপর্বত = বিশাল পর্বত, অন্য অর্থে হিমালয়
লয় = নেয় (নেওয়া অর্থে)
সুবর্ণ = সোনা (স্বর্ণ শব্দের বিকৃত রূপ)
চরণ = পা
গুণ = বিশেষত্ব, বৈশিষ্ট্য
গিরীশ = গিরি + ঈশ, হিমালয়
সুখ-সদন = সুখের আশ্রয়
সদন = আশ্রয়
বারি = জল
নদীরূপ = নদীর মত
বিমলা = মলিনতা হীন নারী, কলঙ্কহীনা নারী
কিঙ্করী = দাসী
অমৃত ফল = স্বর্গীয় ফল, উপাদেয় ফল
পরম আদরে = অত্যন্ত যত্নে
দীর্ঘ-শিরঃ = উন্নত (উঁচু) বৃক্ষ (কবিতায় – যে ব্যক্তি মাথা নত করে না)
তরুদল = বৃক্ষরাজি, গাছেরা
দাসরূপ = দাসের মত
পরিমল = সুগন্ধ
ফুল-কুল = ফুলের বংশ, ফুলসমূহ
দশ দিশ = দশটি দিক (উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, ঈশাণ, অগ্নি, নৈঋত, বায়ু, উর্দ্ধ এবং অধঃ)
শীতলশ্বাসী ছায়া = যে ছায়া শীতল বায়ু দান করে (অর্থাৎ গাছের ছায়া)
বনেশ্বরী = বনের ঈশ্বরী, শ্রেষ্ঠ গাছ
নিশা = রাত
সুশান্ত = শান্ত (আধিক্য)
নিদ্রা = ঘুম
ক্লান্তি = কষ্ট, অবসন্ন-ভাব
** দশটি দিকের নাম ছবিতে দেখানো হলো –
উর্দ্ধ ও অধঃ সহ

অতিরিক্ত তথ্য
কবির জন্ম-মৃত্যু = ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ – ২৯ জুন ১৮৭৩; মাত্র ৪৯ বছরের জীবন
পিতা-মাতা = রাজনারায়ণ দত্ত ও জাহ্নবী দেবী
জন্মস্থান = যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি
স্ত্রী = রেবেকা ম্যাকটাভিস, এমিলিয়া হেনরিয়েটা
শ্রেষ্ঠ কাব্য = ‘মেঘনাদবধ” কাব্য ১৮৬১ খ্রি.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতা সম্পর্কে অন্য লেখা