নবজাগরণের সংজ্ঞা ও ধারণাটির বৈধতা বিচার Class XI History Project

নবজাগরণের সংজ্ঞা ও ধারণাটির বৈধতা বিচার 

Class XI History Project


www.banglaguide.in




১. প্রথম পর্ব



১.১ সূচনা

ইংরেজি রেনেসাঁস (Renaissance) বা বাংলা 'নবজাগরণ' কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল নতুনভাবে জেগে ওঠা। ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে সর্বপ্রথম 'নবজাগরণ' শব্দটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কিদের আক্রমণে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতনের ফলে সেখানকার সৃজনশীল জ্ঞানীগুণী-পণ্ডিতদের অনেকেই ফ্লোরেন্সসহ ইতালির অন্যান্য শহরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এঁদের উদ্যোগে পরবর্তী ২০০ বছর ধরে ফ্লোরেন্সসহ ইতালির বিভিন্ন স্থানে সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, জ্ঞানবিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে। এই অগ্রগতির ধারা ইতালি থেকে ক্রমে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপীয় প্রেক্ষাপটে এই অগ্রগতি 'নবজাগরণ' বা রেনেসাঁস (Renaissance) নামে পরিচিত।

১.২ প্রকল্প

আমার প্রকল্পটির বিষয় হল 'নবজাগরণের সংজ্ঞা এবং নবজাগরণ ধারণাটির বৈধতা বিচার’। আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসের প্রেক্ষাপর্টে বিষয়টির আলোচনা করতে হবে। প্রকল্পটির আলোচনায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নবজাগরণের বিভিন্ন সংজ্ঞার্থ নির্ণয় করা হবে। তথাকথিত এই ‘নবজাগরণ' প্রকৃত অর্থে নবজাগরণ বলে চিহ্নিত হতে পারে কি না তা বিচার করা হবে।

১.৩ প্রকল্পের উদ্দেশ্য

আমার উক্ত প্রকল্পটি রচনার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন—ক- নবজাগরণ’ বা ‘পুনর্জাগরণ' বিষয়টির স্বরূপ উপলব্ধি করা, খ- নবজাগরণের পূর্বে ইউরোপে মধ্যযুগের পশ্চাদগামিতার পরিচয় লাভ করা, গ- নবজাগরণের সময় ইউরোপে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছিল তা সন্ধান করা, ঘ- উক্ত সময়কালের অগ্রগতির ফলে এই যুগকে 'নবজাগরণ' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তা উপলব্ধি করা, নবজাগরণের অগ্রগতির ক্ষেত্রে কাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তা বিচার করা, ঙ- দেশ ও সমাজের কোন্ কোন্ মানুষের মধ্যে নবজাগরণের অগ্রগতির বিশেষ প্রভাব পড়েছিল তা উপলব্ধি করা, চ- ইউরোপের নবজাগরণের প্রেক্ষাপটে উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের বিষয়টি স্মরণে আনা, ছ- পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের এই নবজাগরণকে আদৌ 'নবজাগরণ' বলে অভিহিত করা যায় কি না তা বিচার করা, ও বিচারের সময় বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ঐতিহাসিকদের মতামতের যথার্থতা যাচাই করা ইত্যাদি।



১.৪ প্রকল্পের গুরুত্ব

আমার বর্তমান প্রকল্পটির বিভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে—(ক) নবজাগরণ বা রেনেসাঁস ইউরোপে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণের ক্ষেত্রে কীভাবে বিশেষ অবদান রেখেছিল তা জানার জন্য প্রকল্পটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। (খ) নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি কী ছিল তা প্রকল্পের আলোচনা থেকে জানা সম্ভব হয়েছে। (গ) পঞ্চদশ শতকের পরবর্তীকালে ইউরোপের অগ্রগতিকে কেন কোনো কোনো পণ্ডিত সার্থক ‘নবজাগরণ’ বলে মেনে নিতে রাজি নন তা-ও আমার প্রকল্পটির আলোচনায় উঠে এসেছে।

১.৫ কর্ম পরিকল্পনা

ইউরোপের নবজাগরণ সম্পর্কে প্রকল্প রচনার বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের পর আমি এ বিষয়ে সর্বপ্রথম আমাদের বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ইতিহাসের শিক্ষক/শিক্ষিকা, মহাশয়/মহাশয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছি। এরপর প্রকল্পটি উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। যেমন— বইয়ের সহায়তা নিয়ে প্রকল্পটির কাঠামো তৈরি করেছি। ইউরোপের নবজাগরণ বিষয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে কয়েকটি বই সংগ্রহ করেছি।



২. দ্বিতীয় পর্ব


২.১ তথ্যসংগ্রহ

আমার প্রকল্পটি রচনার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি যেসব বইপত্রের প্রত্যক্ষ সহায়তা নিয়েছি সেগুলি হল— রীলা মুখার্জির ‘রূপান্তরিত ইওরোপ (৯০০-১৮০০), রীলা মুখার্জির 'Europe Transformed' (১৩৫০-১৭৮৯), পুলকেশ রায় ও সায়ন্তন দাসের 'উত্তরণের পথে ইওরোপ: সামন্ততন্ত্রের অবসান থেকে ধনতন্ত্রের সূচনা' (১৪০০-১৭০০), ভাস্কর চক্রবর্তী, সুভাষরঞ্জন চক্রবর্তী ও কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের ইউরোপে যুগান্তর, সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়ের 'আধুনিক ইউরোপ : আদিপর্বের রূপান্তর' (১৪০০-১৭০০) প্রভৃতি। এ ছাড়াও আমাদের উচ্চবিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার এবং আমাদের অঞ্চলের সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে প্রাপ্ত কিছু বইপত্রের নবজাগরণ সম্পর্কিত আলোচনা থেকেও আমাদের প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়েছি।



২.২ তথ্য বিশ্লেষণ

ইউরোপের নবজাগরণ এবং এর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাগুলি বিশ্লেষণ করার পর বিভিন্ন তথ্য জানতে পারলাম। যেমন—

1. সংজ্ঞা ও অর্থ : ‘নবজাগরণ' বা রেনেসাঁস (Renaissance) শব্দের অর্থ হল পুনর্জাগরণ বা নতুনভাবে জেগে ওঠা। অতীতের জ্ঞানের পুনর্জাগরণ সম্পর্কে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে বলা যায় যে, মধ্যযুগের কুসংস্কার ও অজ্ঞানতার অন্ধকার কাটিয়ে পঞ্চদশ শতকে জ্ঞানের আলোয় ইউরোপের উদ্ভাসিত হওয়ার ঘটনাই নবজাগরণ বা পুনর্জাগরণ।

2. 'নবজাগরণ' শব্দটির ধারণা : ফরাসি ঐতিহাসিক মিশলে তাঁর ফ্রান্সের ইতিহাস গ্রন্থে ‘রেনেসাঁস' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। প্রধানত দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে নবজাগরণকে ব্যাখ্যা করা যায়। যথা- নবজাগরণ ছিল প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার পুনরুজ্জীবন। নবজাগরণ ছিল আধুনিক চিন্তা ও মননের উৎস।

3. ধ্রুপদী যুগের অগ্রগতি ব্যাহত: প্রাচীন যুগে ইউরোপে গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা, যুক্তিবাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটেছিল। কিন্তু পরবর্তী মধ্যযুগে ইউরোপে গ্রিক ও ল্যাটিন সংস্কৃতির এই অগ্রগতির ধারা রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর পরিবর্তে মধ্যযুগে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস ইউরোপকে আচ্ছন্ন করেছিল। এর জন্য প্রধানত দায়ী ছিল খ্রিস্টান চার্চের প্রবল আধিপত্য, ধর্মীয় সংকীর্ণতা, যুক্তিবাদী শিক্ষার অভাব প্রভৃতি।

4. মধ্যযুগের অবসান: ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কিরা পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যে রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করে নিলে সেখানকার গ্রিক ও রোমান পণ্ডিতগণ তাঁদের প্রাচীন জ্ঞানের ভাণ্ডার সঙ্গে নিয়ে ইতালিতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাঁদের মাধ্যমেই প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জ্ঞানচর্চা ইউরোপের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মধ্যযুগের অন্ধকার দূর করে পঞ্চদশ শতকের নবজাগরণ ইউরোপে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই নবজাগরণের প্রভাব পড়েছিল। অর্থাৎ অতীত যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুনরুদ্ধার এবং পুনর্মূল্যায়নের প্রচেষ্টাই হল নবজাগরণ।

5. 'নবজাগরণ' শব্দটির যথার্থতা: পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি ইউরোপে তথাকথিত যে নবজাগরণ দেখা দিয়েছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন তার প্রভাব ছিল খুবই সীমিত। খুব কম সংখ্যক মানুষকে তা স্পর্শ করেছিল। ইউরোপের বিস্তীর্ণ অংশে এর কোনো প্রভাবই ছিল না। সাধারণ মানুষের জীবনে ভূশিক্ষা, কুসংস্কার, গোঁড়ামি প্রভৃতি যথারীতি বিরাজমান ছিল। তাই কেউ কেউ একে প্রকৃত নবজাগরণ বলে স্বীকার করেন না।। ঐতিহাসিক ইভান ক্যামেরন (Evan Cameron) বলেছেন যে, আমারা যাকে নবজাগরণ’ বলি তা সম্ভবত পুনর্মূল্যায়নের (Revolution) যুগ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া উচিত।”



২.৩ সিদ্ধান্ত

ইউরোপে পঞ্চদশ শতকের প্রভাব পড়েছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে। শিক্ষার যথেষ্ট বিস্তার ঘটেছিল এবং মানুষের চিন্তাজগতে স্বাধীনতা এসেছিল। মানুষের মন থেকে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারের অন্ধকার দূর হতে শুরু করেছিল। ইউরোপে সাহিত্যের ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল। চিত্রকলার ক্ষেত্রেও ইউরোপে অভাবনীয় অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।



৩. তৃতীয় পর্ব



৩.১ উপকরণ

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে গিয়ে আমি যেসব উপকরণ ব্যবহার করেছি সেগুলি হল—এ-৪ পৃষ্ঠা, রং, তুলি, পেনসিল, স্কেল, আঠা ইত্যাদি।

৩.২ কৃতজ্ঞতা স্বীকার

ইউরোপের নবজাগরণ সম্পর্কে প্রকল্প তৈরি করতে গিয়ে আমি যাদের কাছে যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছি তাঁরা হলেন— আমার বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক/শিক্ষিকা------------------------------------মহাশয়/মহাশয়া। বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের কর্মী।

৩.৪ চিত্র তালিকা

বিভিন্ন বইপত্র থেকে ইউরোপের নবজাগরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার ছবি সংগ্রহ করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ছবি আমি আমার প্রকল্পে ব্যবহার করেছি।








-----------------------------
----------------------------
2 Comments
  • Unknown
    Unknown February 24, 2022 at 8:48 AM

    Hi this is helpful

  • Unknown
    Unknown March 5, 2022 at 1:19 AM

    Give me pdf

Add Comment
comment url