আমার বাংলা থেকে বড়ো প্রশ্ন রচনাধর্মী প্রশ্ন | সুভাষ মুখোপাধ্যায় | দ্বাদশ শ্রেণি | Amar Bangla By Subash Mukhopadhyay | Long Question Answer | PDF Download
গারো পাহাড়ের নীচে
[১] “এত ফসল, এত প্রাচুর্য—তবু কিন্তু মানুষগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় জীবনে তাদের শান্তি নেই।“—মানুষগুলোর জীবনযাত্রার পরিচয় দাও। তাদের জীবনে শান্তি নেই কেন? [২০২০]
[অথবা] গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী ‘হাজং’দের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও।
ফসল খামারে তোলার সময় তারা দারিদ্র্য মুছে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। লেখক বলেছেন- ধান কাটার সময় হলে নারী-পুরুষ সবাই কাস্তে নিয়ে মাঠে যায়। ছোটো ছেলেরা পিঠে ধানের আঁটি বেঁধে খামারে দিয়ে আসে। কিন্তু উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার আগেই জমিদারের পাইক-বরকন্দাজ ‘শনি’র মতো আবির্ভূত হয়ে খাজনা বাবদ ফসল নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় অংশ—গাঁয়ের আলবাঁধা রাস্তায় ঘোড়ার খুরের শব্দ কিংবা নাগরা জুতোর খটখট শব্দে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে যায়। ছোটো ছেলেরা ভয়ে মায়ের আঁচলে লুকোয়, খিটখিটে বুড়িরা পেয়াদাদের অভিশাপ দিতে থাকে। জমিদারকে টাকা দিতে গিয়ে কৃষকেরা সর্বস্বান্ত হয়। ‘শনি’র দৃষ্টিতে ছারখার হয়ে যায় সুসং পরগনার অধিবাসীদের স্বপ্ন। সুদখোর মহাজন ও জমিদারের শোষণে এরা স্বাভাবিক ও সচ্ছল জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের জীবনের কথা নিজেরাই ছড়ার মাধ্যমে বলে—
বারবার ধান বুনে জমিতে
মনে ভাবি বাঁচা যাবে আরামে।
তারপর পালে আসে পেয়াদা
খালি পেটে তাই লাগছে ধাঁধা।।
এইভাবে লেখক সাধারণ মানুষের দুঃখকে এবং জমিদারের শোষণের চিত্রটি নিপুণভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।
[অথবা] “তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল”—প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল কেন? এই বিদ্রোহের ফল কী হয়েছিল?
সূচনা—সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রিপোর্টাজধর্মী রচনা ‘আমার বাংলা’র ‘গারো পাহাড়ের নীচে’ শিরোনামাঙ্কিত অংশে ‘হাতি-বেগার’ প্রসঙ্গটি রয়েছে। গারো অঞ্চলে প্রচলিত নিষ্ঠুর সেই অলিখিত আইন সম্পর্কে লেখক বিশেষ তথ্য দিয়েছেন।
বিদ্রোহের কারণ—এইধরনের নিষ্ঠুর প্রথার পাশাপাশি ছিল জমিদারদের অত্যাচার ও শোষণ। উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে যেত জমিদারের লোকজন। জমিদারদের খাজনা পরিশোধ করতে প্রজারা নিঃস্ব হয়ে পড়ত। এইসব কারণে এই অঞ্চলের প্রজারা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।
পরবর্তী পরিস্থিতি—দীর্ঘকাল প্রচলিত এই অত্যাচার এবং জমিদার-মহাজনদের শোষণ সহ্য করতে না পেরে বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রজারা গোরাচাদ মাস্টারের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। গোপনে বিভিন্ন স্থানে মিটিং বসল, কামারশালায় তৈরি হতে থাকে অস্ত্রশস্ত্র। লড়াই বাঁধল জমিদারের লাঠিয়ালদের সঙ্গে। অপটু চাষিদের পরাজয় হলেও এই বিদ্রোহের পরিণামে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় ‘হাতিবেগার’ প্রথা।
ছাতির বদল হাতি
[৩] “তাতে চেংমানের চোখ কপালে উঠল”–চেংমান কে? তার চোখ কপালে ওঠার কারণ কী ? [২০১৭]
[অথবা] “নতুন ছাতি মাথায় দিয়ে মহাফূর্তিতে বাড়ির দিকে সে চলল”—কার কথা বলা হয়েছে? সে নতুন ছাতি কীভাবে পেল? [২০১৯]
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ছাতির বদলে হাতি’ (‘আমার বাংলা’ প্রবন্ধ) নিবন্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল চেংমান নামক গারো চাষি, যে ধূর্ত মহাজনের কৌশল না বুঝতে পেরে সর্বহারা হয়েছিল।
ছাতি কীভাবে পেয়েছিল—হালুয়াঘাট বন্দরের মনমোহন মহাজনের বন্ধকি-তেজারতির ফাঁদে পড়েই সর্বস্বান্ত হয়েছিল গারো চাষি চেংমান। হালুয়াঘাট বন্দরে সওদা করতে এসে মুশলধারে বৃষ্টিতে আটকে গিয়েছিল চেংমান। তখন সে মহাজনের দোকানের ঝাঁপির নীচে আশ্রয় নেয়। চেংমানের দুরবস্থা দেখে করুণার অবতার হয়ে মনমোহন খাস কলকাতা থেকে আনা আনকোরা নতুন একটা ছাতা তাকে দিয়ে দেয়। এই ঘটনায় চেংমান হতবাক হলেও, মনমোহন তাকে ভরসা দিয়ে বলে সুবিধামতো পয়সা দিলেই হবে। সরলহৃদয় চেংমান মহাজনের কৌশল না বুঝে বাড়ি চলে যায়।
পরিণতি—বারবার পাওনা মেটাতে গেলে মহাজন আমল দেয় না দেখে ক্রমে চেংমান ভুলে যায় সেই ধারের কথা। কয়েক বছর পর মনমোহন তাকে ধরে ধার মেটাতে চাইলে হিসাব দেখে চেংমান অবাক হয়ে যায়। কারণ সামান্য ছাতার বদলে মহাজন দাবি করে হাজারখানেক টাকা। চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে যা প্রায় একটা হাতির দামের সমান। এই ঘটনায় সামান্য গারো চাষি চেংমানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মহাজন তাঁর কাছ থেকে ছত্রিশ বিঘে জমি ছাতার বদলে দখল করেছিল।
[৪] “আর এক রকমের প্রথা আছে— নানকার প্রথা।”—নানকার প্রজাদের অবস্থা কেমন ছিল? পরে তাদের অবস্থার কী পরিবর্তন হয়েছিল? [২০১৫]
সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘ছাতির বদলে হাতি’ নিবন্ধে জমিদার কর্তৃক প্রজাদের অত্যাচারের কাহিনি বলতে গিয়ে ‘নানকার প্রথা’র উল্লেখ করেছেন।
নানকার প্রথা ও প্রজাদের অবস্থা—নানকার প্রথায় আবদ্ধ প্রজারা কেবল জমির স্বত্বই নয়, জমির আম-কাঁঠালের অধিকারটুকুও পেত না। জমি জরিপের পর আড়াই টাকা পর্যন্ত খাজনা দিতে হত। মহাজনরা তাদের থেকে কর্জা ধানে এক মণে দু-মণ সুদ উশুল করত। খাজনা দিতে না পারার অপরাধে তহশিলদাররা কাছারিতে ধরে আনত প্রজাদের। পিছমোড়া করে বেঁধে তাদেরকে মালঘরে আটকে রাখা হত। তারপর নিলামে তার সম্পত্তি করায়ত্ত করত পাওনাদাররা। এভাবেই চলত নানকার প্রজাদের উপর অত্যাচার।
পরবর্তী পরিস্থিতি—এইভাবে নিপীড়িত হতে হতে প্রজারা ভুলে গিয়েছিল তাদের অধিকার। কিন্তু গারো পাহাড়ের নীচে যখন কমিউনিস্ট আদর্শ ছরিয়ে পড়ে তখন সমবেত হয় এখানকার প্রজারা। তাদের সমবেত লড়াইয়ের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয় জমিদার, পুলিশ পেয়াদা। লুপ্ত হয় নানকার প্রথা। একত্রিত হয়ে তারা গাঁতায় চাষ শুরু করে। রুক্ষ মাটির প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পাথুরে মাটিতে সোনার ফসল ফলায়।
তারা সামাজিকভাবে সম্মান পেল। পরিবর্তন এলো তাদের ব্যক্তিগত জীবনচর্যাতেও। একসময় বাপ-ছেলে একসঙ্গে মদ খেলেও, এখন তাদের কাছে মদ খাওয়া লজ্জাজনক। এভাবে ক্রমশ সচেতন হয়ে উঠল নিরীহ, সরল গারো পাহাড়ের অধিবাসীরা।
[৫] “ছিল জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন।”—শাসন সম্পর্কে লেখক কী জানিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো। [২০১৮]
ভূমিকা—‘ছাতির বদলে হাতি’ নিবন্ধে সুভাষ মুখোপাধ্যায় মহাজন, জমিদার, জোতদার, তালুকদার প্রমুখের অত্যাচারে শোষিত প্রজাদের দুর্বিষহ জীবনকাহিনি তুলে ধরেছেন।
(১) নিবন্ধের শুরুতে গারো চাষি চেংমানের কাহিনি জমিদারি শোষণের জ্বলন্ত সাক্ষ্য দেয়। হালুয়াঘাট বন্দরে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সে মহাজনের দোকানের ঝাঁপির নীচে আশ্রয় নিলে, মহাজন তার নতুন ছাতা দিয়ে চেংমানকে সাহায্য করে। নগদ পয়সা না নিয়ে ধারে দেওয়া ছাতার বিনিময়ে কয়েক বছর পর মহাজন চেংমানের কাছে হাজারখানেক টাকা দাবি করে এবং বিনিময়ে তার ছত্রিশ বিঘা জমি হস্তগত করে। একইভাবে দেনার দায়ে নিবেদনের ছেষট্টি বিঘা জমি নিয়েছিল মহাজন কুটিশ্বর সাহা। কোদালের বিনিময়ে এক মহাজন চাষির কাছ থেকে নিয়েছিল ১৫ বিঘা জমি।
(২) মনমোহন, কুটিশ্বর সাহার মতো মহাজনদের চক্রান্তে ডালু হাজংদের বংশানুক্রমে শোষণ ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। অন্যদিকে জমিদারের পাওনা না মেটালে চাষি ধানের অধিকার পেত না। চুক্তির ধান, কর্জার ধান, আরো নানা কর দিয়ে চাষি শূন্য হাতে ঘরে ফিরত।
(৩) এরই সঙ্গে প্রচলিত ছিল ‘নানকার প্রথা’, যেখানে প্রজাদের জমির স্বত্ব ছিল না। জমি জরিপের আড়াই টাকা পর্যন্ত খাজনা ধার্য হত। আর খাজনা দিতে না পারলে কাছারিতে আটক, মালঘরে আটক, পিছমোড়া করে মার, সম্পত্তি নিলাম করা হত। গারো অঞ্চলের প্রজাদের দুঃখ-কষ্টের কাহিনি প্রাবন্ধিক এভাবে প্রকাশ করেছেন ‘ছাতির বদলে হাতি’ নিবন্ধটিতে।
——————————-
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা থেকে অন্য প্রশ্ন
————————
ক্লাস ১২ এর অন্যান্য বিষয়ের লেখ
—————————
PDF Download Link নিচে
————————
———————
———————


