আধুনিক বাংলা সাহিত্য বড়ো প্রশ্ন উত্তর Class 11 2nd Sem
আধুনিক বাংলা সাহিত্য : একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টারের আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা অংশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেওয়া হল।
আধুনিক বাংলা সাহিত্য বড়ো প্রশ্ন উত্তর Class 11 2nd Sem
প্রশ্নঃ বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।
বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী : বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান স্মরণীয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকগোষ্ঠী ও রামমোহন রায়ের পর বিদ্যাসাগরের হাতেই বাংলা গদ্যসাহিত্য সংহত রূপ পায়। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়—“বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন।”
বিদ্যাসাগরের সাহিত্যকর্ম নিম্নে উদ্ধৃত হলো—
অনুবাদমূলক রচনার মধ্যে রয়েছে বেতাল পঞ্চবিংশতি, সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস, কথামালা প্রভৃতি। সমাজ-সংস্কারমূলক লেখা হলো বিধবাবিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব ইত্যাদি। লঘু রচনার মধ্যে অতি অল্প হইল, আবার অতি অল্প হইল ইত্যাদি। এবং তাঁর মৌলিক রচনা হলো বর্ণপরিচয়, সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা।
বাংলা গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান
(১) উপযুক্ত স্থানে যতিচিহ্ন স্থাপন করে প্রথম গদ্যছন্দকে প্রকৃষ্টরূপে ব্যবহার করেন বিদ্যাসাগর।
(২) বিদ্যাসাগরের ভাষা স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জল। সন্ধি ও সমাসের ব্যবহার থাকলেও ভাষাকে তা আরও গতিময় করে তুলেছে।
(৩) গদ্যের নানা বৈচিত্র্য যেমন– বিবৃতিমূলক, আবেগমূলক, বিতর্কমূলক, ব্যাঙ্গ-শ্লেষ, স্মৃতিচারণ প্রভৃতি তাঁর গদ্যের ভিত্তিকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
(৪) তৎসম, তদ্ভব শব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি লঘু রচনায় আরবি-ফারসি শব্দের বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়, যা তাঁর গদ্যকে সাবলীল করে তোলে।
মূল্যায়ন : বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক স্রষ্ঠার মর্যাদা দেওয়া যায়। বাংলা ভাষার বিশেষ করে সাধু বাংলা গদ্যভাষার সৌন্দর্য বিদ্যাসাগরের হাতেই বিকশিত হয়।
প্রশ্নঃ নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃতিত্ব আলোচনা করো।
সূচনা : বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে মধুসূদন দত্ত স্মরণীয় একটি নাম। তাঁর হাতেই আধুনিক নাটকের সূচনা। নাট্যকার হিসেবেই বাংলা সাহিত্য জগতে মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব হয়েছে। কবি মধুসূদন দত্ত বঙ্গসমাজে কু-নাটক মঞ্চস্থ হওয়া দেখে সু-নাট্য রচনার উদ্যোগ তিনি নিজের হাতেই গ্রহণ করেন। তাঁর রচিত প্রথম নাটকটি ছিল ‘শর্মিষ্ঠা’।
নাটকসমূহ : মধুসূদন দত্ত রচিত নাটক ও প্রহসনগুলি হল—
- ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৯ খ্রি.)
- ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০)
- ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১)
- ‘মায়াকানন’ (১৮৭৪)
- ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ (১৮৬০)
- ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ (১৮৬০)
নাট্যসাহিত্যের মধুসূদন দত্তের অবদান
নাট্যকার মধুসূদন দত্তের প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাটক হল ‘শর্মিষ্ঠা’। মহাভারতের ‘শর্মিষ্ঠা-দেবযানি-যযাতি’ কাহিনি অবলম্বনে এটি রচিত হয়েছে। ‘পদ্মাবতী’ নাটক পাশ্চাত্যের কাহিনি অবলম্বনে রচিত। গ্রিক পুরাণে ‘apple of discord’ অবলম্বনে নাট্যকার মধুসূদন এই নাটক রচনা করেছেন। তাঁর ‘কৃষ্ণকুমারী’ একটি ট্রাজেডি নাটক। কর্নেল টডের লেখা রাজস্থানের ইতিহাস এই নাটকের অনুপ্রেরণা। এই নাটক বাংলা নাট্যসাহিত্যের সর্বপ্রথম ট্রাজেডি নাটক। সমকালীন বঙ্গসমাজের যুবসমাজের মধ্যে আধুনিকতার নামে যে উচ্ছৃঙ্খলতা প্রকাশ পেয়েছিল তা রূপ পেয়েছে ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ প্রহসনে। একইভাবে কপট, ভণ্ড, বকধার্মিক এক বৃদ্ধের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনে। প্রহসন রচনায় মাইকেল মধুসূদন দত্তই পথিকৃৎ।
উপসংহার : মধুসূদন দত্তের হাতেই বাংলা নাটক আধুনিক রূপ পায়। চরিত্র অনুযায়ী তিনি ভাষা ও সংলাপ ব্যবহার করেছেন। বিশেষত প্রহসন ও ঐতিহাসিক ট্রাজেডি রচনায় তাঁর কৃতিত্ব উল্লেখনীয়।
চলবে…