প্রিয় উচ্চ-মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো উচ্চ-মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় || ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার || ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE Higher Secondary HS History Question and Answer | 12th History Examination – দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে | ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার থেকে বড়ো ৮ নম্বরের প্রশ্ন | ক্লাস-১২ | ২য় অধ্যায় | রচনাধর্মী প্রশ্ন | দ্বাদশ শ্রেণি | WB HS Class 12 XII | 2nd Chapter | Long Descriptive Questions & Answers PDF
ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার
১--ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসন ও লেনিনের থিসিস বা তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর। ৮ [২০১৫/২০১৭/২০২০]
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সূচনা:
আধুনিক বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি অর্থনৈতিক দিক থেকে অনগ্রসর বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে সমর্থ হয়েছে, যা ‘ঔপনিবেশিকতাবাদ’ নামে পরিচিত। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের উদ্যোগ যথেষ্ট বুদ্ধি পেয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাদাতাদের মধ্যে সর্বাধিক অগ্রগণ্য হলেন জে. এ. হবসন এবং ভি আই লেনিন। এই সম্পর্কে তাঁদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা ‘হবসন-লেনিন থিসিস’ (Hobson-Lenin thesis) নামে পরিচিত।
হবসনের ব্যাখ্যা
জে.এ. হবসন একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। ‘সাম্রাজ্যবাদ-একটি সমীক্ষা' (Imperialism: A Study) গ্রন্থে তাঁর মূল বক্তব্য সম্বন্ধে জানা যায়। হবসনের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যার প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি নিম্নরূপ:
[ক] উদ্বৃত্ত পুঁজির সৃষ্টি:
ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি মালিকদের হাতে বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর মুলধন সঞ্চিত হয়। ইউরোপের পুঁজিপতিরা এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজেদের দেশে শিল্পের প্রসার ঘটাত এবং উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য অনুন্নত দেশগুলিতে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করত।
[খ] পুঁজিপতিদের চাপ: ‘
বাড়তি মূলধনের চাপ'ই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ। পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের উর্দুবৃত্ত মুলধন উপনিবেশে বিনিয়োগ করে আর মুনাফা অর পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা নিজ নিজ দেশের সরকারকে চাপ দিয়ে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে।
[গ] শোষণ:
পুঁজিপতি শ্রেণির অন্যতম লক্ষ্য ছিল অধিক মুনাফা ও সম্পদ অর্জন। এই লোভে তারা সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ, উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রির বাজার দখল প্রভৃতির জন্য ইউরোপের বাইরে এশিয়া ও আফ্রিকায় নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা নিজ দেশের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
[ঘ] ঔপনিবেশিকতা অবসানের উপায়:
হবসন বলেন যে, সম্পদের সুষম বণ্টন ও অভ্যন্তরীণ সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে। তিনি পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যে তা ব্যবহারের কথা বলেন। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হলে তারা কলকারখানায় উৎপাদিত উদ্বৃত্ত শিল্পসামগ্রী কিনে ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে উদ্বৃত্ত পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য আর উপনিবেশ দখলের প্রয়োজন হবে না।
লেনিনের ব্যাখ্যা
বিখ্যাত রুশ কমিউনিস্ট নেতা ভি আই লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারে অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘Imperialism : the Highest Stage of Capitalism গ্রন্থে।
[ক] পুঁজির উদ্ভব:
শিল্পের অগ্রগতির ফলে ইউরোপের দেশগুলির মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি সঞ্চিত হয়। এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদী দেশগুলি ইউরোপের বাইরে নতুন উপনিবেশের প্রসার ঘটিয়ে সেখানে উদ্বৃত্ত পুঁজি বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
[খ] বাজার দখল ও কাঁচামাল সংগ্রহ:
লেনিনের মতে, পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। বেশি মুনাফা লাভের আশায় দেশের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই পণ্য বিক্রি এবং শিল্পোৎপাদনের জন্য সস্তায় কাচামাল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পুঁজিবাদী গুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়।
[গ] প্রতিদ্বন্দ্বিতা:
বিভিন্ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উপনিবেশ দখলের উদ্যোগ নিলেও উপনিবেশের সংখ্যা ছিল সীমিত। পরবর্তীকালে উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে কাড়াকাড়ি অর্থাৎ প্রতিযোগিতা হয়ে যায়। এই প্রতিযোগিতার পরিণতি হল যুদ্ধ। লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী অর্থনীতি হল যুদ্ধের জন্মদাতা।
[ঘ] শ্রমিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠা:
ইউরোপের পুঁজিপতি শ্রেণি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত অঞ্চলগুলিকে বেছে নিয়ে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং সেখানকার নতুন শ্রমিক শ্রেণির ওপর সীমাহীন শোষণ চালায়। এর পুঁজিপতিরা যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লাভ করে তার একটি ক্ষুদ্র অংশ নিজ দেশের শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে খরচ করে তাদের বশীভূত করে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অনুগত একধরনের অভিজাত শ্রমিক শ্রেণি তৈরি করে।
২--হবসন-লেনিন থিসিসের সমালোচনা/সীমাবদ্ধতা উল্লেখ কর। এই তত্ত্বের গুরুত্ব লেখ। ৪
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে শিল্পোনত ও পুঁজিবাদী দেশগুলি কর্তৃক কাঁচামাল সংগ্রহ, বাজার দখল, বিনিয়োগের ক্ষেত্র অনুসন্ধান প্রভৃতি বিষয়গুলির যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও হবসন-লেনিন প্রদত্ত ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ দোষমুক্ত ছিল না। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই মতবাদের সমালোচনা করা হয়। যেমন—
[১] উদবৃত্ত পুঁজির সমগ্র অংশই এশিয়া বা আফ্রিকার উপনিবেশগুলিতে লগ্নি করা হয়নি। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি তাদের মূলধনের বেশিরভাগটাই রাশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিক বিনিয়োগ করেছিল—যেগুলি তাদের উপনিবেশ ছিল না।
[২] শিল্পবিপ্লব ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে উনিশ শতকে। অথচ তাঁর আগে কেন উপনিবেশের উদ্ভব ঘটল তার কোনো ব্যাখ্যা হবসন বা লেনিনের তত্ত্বে পাওয়া যায় না।
[৩] লেনিন মনে করতেন যে, শিল্পোন্নত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই ভালো ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, ডেনমার্ক, সুইডেন প্রভৃতি দেশের কোনো উপনিবেশ ন থাকা সত্ত্বেও এসব দেশের শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মনে যথেষ্ট উন্নত ছিল। সেই তুলনায় উপনিবেশিক রাষ্ট্র ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের শ্রমিকদের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল।
[৪] বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ঔপনিবেশিক শোষণ নয়, সুসম্পর্কের দ্বারাই অধিক পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করা সম্ভব। কিন্তু হবসন-লেনিনের তত্ত্বে এই সুসম্পর্কের গুরুত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় না।
[৫] ডেভিড টমসন সাম্রাজ্যবাদের প্রসাবের লেনিনের তত্ত্বকে মৌলিক ও সম্পূর্ণ বলে মনে করেন না।
গুরুত্ব:
সাম্রাজ্যবাদের ব্যাখ্যায় হবসন ও লেনিনের মতবাদে বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও এই মতবাদের গুরুত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা যায় না। সাম্রাজ্যবাদের ব্যাখ্যা হিসেবে এই তত্ত্ব নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। সাগরপারে বিনিয়োগ যে ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল তার প্রমাণ মেলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই অঞ্চলে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ থেকে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি প্রভৃতি দেশগুলি এই সময়ের মধ্যে এই অঞ্চলে প্রায় ত্রিশ হাজার মিলিয়ন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল।
৩--সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের কারণ আলোচনা কর।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ভূমিকা--
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্যের প্রসার ঘটানো। তবে কোনো একটি অভিমত সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের কারণ ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য বিভিন্ন কারণকেই দায়ী করা যায়।
রাজনৈতিক কারণ
[১] উগ্র জাতীয়তাবাদ--
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। প্রতিটি জাতিই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।
[২] ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা--
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইউরোপের দেশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়।
অর্থনৈতিক কারণ
[৩] পণ্য বিক্রির বাজার ও কাঁচামাল সংগ্রহ--
শিল্পবিপ্লব ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়। কলকারখানায় বিপুল পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হতে থাকে। উদবৃত্ত পণ্য বিক্রির জন্য ইউরোপের দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অনুন্নত দেশের বাজার দখলের চেষ্টা চালায়। কারখানাগুলিতে এই বিপুল পরিমাণ কঁচামালের জোগান বজায় রাখতে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি সুকৌশলে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে সেখানে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
[৪] শ্রমিক সংগ্রহ--
ইউরোপের কলকারখানাগুলিতে কায়িক শ্রমদানের জন্য সস্তায় প্রচুর সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সস্তায় প্রচুর শ্রমিকের জোগান অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হত।
সামাজিক কারণ
[৫] জনসংখ্যা বৃদ্ধি--
ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই জনসংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান এবং কর্মসংস্থান মুশকিল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তাদের বাড়তি লোকজনের বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়।
[৬] সভ্যতার প্রসার—
ইউরোপের কোনো কোনো সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাবিদ মনে করতেন এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত মানুষদের প্রতি ইউরোপের 'সাদা চামড়ার মানুষ’দের কিছু দায়বদ্ধতা আছে। তাঁরা মনে করতেন যে, অনুন্নত জাতিগুলিকে সভ্য করে তোলা উন্নত জাতিগুলির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
[৭] সামরিক কারণ--
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে থাকে। নিজ দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সামরিক ও নৌঘাঁটি স্থাপন করতে থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্যেও উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।
[৮] ধর্মীয় কারণ—
ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকগণ এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিগুলিকে আলোর জগতে আনার উদ্যোগ নেয়। ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি মানব কল্যাণ এবং নিপীড়িত জনগণের মঙ্গলসাধনের উদ্দেশ্যে এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে ধর্মপ্রচারকরা যাত্রা করে।
[৯] প্রযুক্তিগত কারণ—
উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, যন্ত্রচালিত যান ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের অভিযান স্পৃহা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করেছিল। উন্নত প্রযুক্তিতে গড়ে ওঠা নৌসংগঠনগুলি উপনিবেশ দখলের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করত।
উপসংহার—
এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে অর্থনৈতিক শোষণ ও লুন্ঠন চালায়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এইসব অধিকৃত অঞ্চলগুলি স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করে। ১৯৯৯ সালে পোর্তুগাল ‘ম্যাকা চিন’কে ছেড়ে দিলে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে।
৪--ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে জাতি-প্রশ্নের সদর্থক ও নঞর্থক প্রভাবগুলি কী ছিল? [২০১৮]
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
[উত্তর] উনিশ শতকের বহু আগে থেকেই ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে শাসক-জাতি শাসিত-জাতির বিরুদ্ধে তীব্র জাতিবিদ্বেষ প্রচার করে। উপনিবেশগুলিকে জাতিগত ব্যবধানের সু- ও কু- এই দুই প্রভাবই প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন—
নঞর্থক প্রভাব বা খারাপ দিক
অমানবিকতা--
এশিয়া ও আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ শাসিত জাতিগুলি দীর্ঘকাল ধরে ঘৃণা, বিদ্বেষ, অবহেলা ও অমানবিকতার শিকার হয়। বিভিন্ন স্থান ও প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় জাতির জন্য সংরক্ষিত থাকায় দেশীয় জাতিগুলি সেগুলি ব্যবহারের অধিকার হারায়। কোনো দেশীয় ব্যক্তি কুকুরের সমতুল্য গণ্য হত।
জাতিগত শোষণ—
ঔপনিবেশিক অঞ্চলে শাসক ও শাসিতের মধ্যেকার জাতিগত ব্যবধান উপনিবেশের মানুষের ওপর তীব্র শোষণ ও অত্যচারের সুত্রপাত ঘটায়। পরাধীন জাতিগুলির ওপর বিপুল পরিমাণ করের বোঝা চাপিয়ে দেয় যাতে তীব্র আর্থিক শোষণ, খাদ্যাভাব প্রভৃতি ঘটনা পরাধীন জাতিগুলিকে সীমাহীন দুরবস্থায় ফেলে দেয়।
শ্রমিক রপ্তানি--
শ্বেতাঙ্গ জাতিগুলি ভারত, চিন-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিকদের চুক্তির ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় ও উপনিবেশে পাঠাতো। উপনিবেশের খামারগুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আসত।
শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বৈষম্য--
উপনিবেশে শাসক শ্বেতাঙ্গ ও শাসিত কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে তীব্র বৈষম্য ছিল। কৃষ্ণাঙ্গরা কোনোরকম সুযোগ সুবিধা পেত না। পেত না সঠিক বিচার। তারা সব ক্ষেত্রে অবহেলিত হত।
সদর্থক প্রভাব বা ভালো দিক
জাতিগত-প্রশ্ন প্রসঙ্গে শুধুমাত্র নঞর্থক প্রভাবই ছিল না, এর ভালো দিকও ছিল। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো—
[ক] জ্ঞানের প্রসার
[খ] শিল্পকলার উন্নতি
[গ] বিজ্ঞানের উন্নতি
[ঘ] পাশ্চাত্য উদার সংস্কৃতির সান্নিধ্য
[ঙ] নবজাগরণ
উপরের প্রতিটি বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতির উন্নতির জন্য। ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে বিজ্ঞান, শিল্পকলায় শাসিত জাতি উন্নতি করতে থাকে। পরবর্তীতে স্বাধীনতালাভের প্রশ্নে এই বিষয়গুলি অনুঘটকের কাজ করেছিল সন্দেহ নেই।
৫—মার্কেন্টাইল মূলধন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৪
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মার্কেন্টাইলবাদ কী--
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যখন নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার করতে শুরু করে তখন ইউরোপে ‘মার্কেন্টাইলবাদ’ নামে এক ‘সংরক্ষণবাদী' অর্থনৈতিক মতবাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর 'ওয়েল্থ অব নেশন্স' (Wealth of Nations) গ্রন্থে সর্বপ্রথম 'Mercantilism' বা 'মার্কেন্টাইলবাদ' কথাটি ব্যবহার করেন। মার্কেন্টাইলবাদ ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল। এই মতবাদ বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগণের সমর্থন লাভ করে।
মার্কেন্টাইল মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলি ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটায়।
মার্কেন্টাইল মতবাদের মূল বক্তব্য
অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ—
এই মতবাদে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রাধীন হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের স্বার্থ এবং বণিক ও উৎপাদকদের স্বার্থ একই বলে বিবেচিত হতে শুরু করে। মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদে'র রূপ নেয়।
কৃষিনীতি--
মার্কেন্টাইল মতবাদে খাদ্যশস্য রপ্তানির কথা বলা হয়নি। ফলস্বরূপ কৃষির উন্নতি ঘটিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ দেখা যেত না।
আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি--
মার্কেন্টাইল মতবাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সম্পদের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার। এই উদ্দেশ্যে আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর কথা বলা হয়।
সোনা ও রূপার গুরুত্ব--
মার্কেন্টাইল নীতি অনুসারে, সোনা ও রুপোর বৃদ্ধির উপর সেই দেশের জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি নির্ভরশীল ছিল।
সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসার--
এই মতবাদ অনুযায়ী সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসার এবং উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগী হওয়া জরুরি কারণ এতে জাতীয় সম্পদ ও মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে।
উপনিবেশ স্থাপন--
মার্কেন্টাইল নীতি অনুসারে, ইউরোপীয় দেশগুলি কাঁচামাল সংগ্রহ ও পণ্য বিক্রির বাজার দখলের উদ্দেশ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন ।
অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা—
এই মতবাদ অবাধ বাণিজ্যের ঘোর বিরোধী। অন্য দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলেই স্বদেশের উন্নতি হবে।
সমালোচনা—
যাইহোক এই মতবাদ বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়। অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা, অযথা সরকারি হস্তক্ষেপ প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে এই মতবাদ ক্রমশ অকাজের হয়ে পড়ে। এবং পরবর্তীকালে ‘পুঁজিবাদী মূলধন’ মতবাদ জনপ্রিয় হয়।
৬—শিল্প ও পুঁজিবাদী মূলধন সম্পর্কে লেখ। ৪
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
শিল্প মুলধন—
অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে মার্কেন্টাইল মতবাদ ইউরোপে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। এই সময় ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথের নেতৃত্বে এক নতুন অর্থনৈতিক চিন্তা ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক শ্রেণির বণিকদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ জমা হয় এবং এই মুলধন শিল্প ও বাণিজোর নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। এভাবে ইউরোপে এক ধরনের পুঁজিপতি বা মূলধনি শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুনাফা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে যে পুঁজি বিনিয়োগ করা হয় তা সাধারণভাবে শিল্প মূলধন নামে পরিচিত।
বিস্তারিত আলোচনা
[১] পুঁজিপতিদের উদ্ভব—
ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের ঘটনা পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটায়। ইংল্যান্ডে ১৭৬০-৮০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শিল্পবিপ্লবের সূচনা হলেও এর দ্রুত প্রসার শুরু হয় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের পর। শিল্পবিপ্লবের ফলে ইউরোপের দেশগুলিতে বিরাট সম্পদ ও মুলধনের সৃষ্টি হয়। মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে এই সম্পদ কেন্দ্রীভূত হলে তারা পুঁজিপতি শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এভাবে ইউরোপে পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে।
[২] পণ্য বিক্রয়—
উনবিংশ শতকে ইউরোপে শিল্পোৎপাদন অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। নিজ দেশের চাহিদা মেটানোর পরও বহু পণ্য উদবৃত্ত থেকে যায়। এসব উদ্বৃত্ত শিল্পপণ্য বহুগুণ বেশি দামে বিক্রির জন্য এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে পাঠানো হয়। এভাবে উপনিবেশগুলি ইউরোপীয় শিল্পপণ্যের বিরাট বাজারে পরিণত হয়।
[৩] কাঁচামাল সংগ্রহ—
ইউরোপে শিল্পোৎপাদনের কাজ অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল কারখানাগুলিতে নিয়মিত তুলো, রেশম, রবার, উদ্ভিজ তেল, বিভিন্ন খনিজ পদার্থ প্রভৃতি কাঁচামালের জোগান অব্যাহত রাখা। ধনতান্ত্রিক দেশগুলি কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে।
[৪] পুঁজি বিনিয়োগ—
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পুঁজিপতিরা নিজেদের বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল শীঘ্রই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপনিবেশে পরিণত হয়।
[৫] উপনিবেশের প্রসার—
পুঁজিবাদের চূড়ান্ত পরিণতি হলো সাম্রাজ্যবাদ। অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের স্বার্থে, পণ্য বিক্রির বাজার তৈরি করতে উপনিবেশ প্রসার বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
ত্রুটি-বিচ্যুতি
১। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদ মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে জমা হয়।
২। শিল্প ও পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চুড়ান্ত পরিণতি হল সাম্রাজ্যবাদ।
৩। পুঁজিপতিদের উদ্যোগে উপনিবেশগুলিতে বিদেশি পণ্যে বাজার ছেয়ে গেলে দেশীয় হস্ত ও কুটির শিল্প ধ্বংস হয়। প্রভৃতি।
৭—ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল আলোচনা কর। ৪
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এশিয়া মহাদেশ, নতুন বিশ্ব অর্থাৎ আমেরিকা ও পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল ও তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১. সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধি :
ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ইউরোপের সঙ্গে আমেরিকার সামুদ্রিক বাণিজ্যের সূত্রপাত ঘটে। ফলে ইউরোপের বাণিজ্য আরও সমৃদ্ধ হয়।
২. শোষণ :
বিভিন্ন প্রান্তের উপনিবেশগুলিতে সীমাহীন শোষণ শুরু হয়। নানারকম অর্থনৈতিক শোষণ চালানো হয়। এই শোষণের মাধ্যমে ইউরোপ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
৩. দারিদ্র্য বৃদ্ধি :
মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ফলে ইউরোপের দরিদ্র মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য যথেষ্ট বাড়লেও সেই তুলনায় মজুর ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি।
৪. পুঁজিপতি শ্রেণির উত্থান :
বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে সম্পদ আমদানির ফলে ইউরোপের একশ্রেণির বণিকদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ জমা হয়। এভাবে পুঁজিপতি বা ক্যাপিটালিস্ট (Capitalist) শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
৫. শিল্পে অগ্রগতি :
মূলধনের জোগান, উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি, উপনিবেশে পণ্য বিক্রির বাজারের প্রসার প্রভৃতির ফলে ইউরোপে শিল্পোৎপাদন ক্রমে বাড়তে থাকে। ইংল্যান্ডে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যায়। সর্বাধিক অগ্রগতি লক্ষ করা যায় বস্ত্রশিল্পে।
এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় ইউরোপীয়দের বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে উঠলে এইসব অঞ্চলে তাদের অর্থনীতির প্রসার ঘটে। এভাবে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে। এককথায় ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল সুদূরপ্রসারী ছিল।
৮—জাতিগত প্রশ্ন সম্পর্কে লেখ। ৮
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
---------------------------------------------------------------------------------
File Name : ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার থেকে বড়ো ৮ নম্বরের প্রশ্ন
ইউরোপের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর ফলে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের জনগণ সুস্পষ্ট দুটি জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে—
- শাসক জাতি এবং
- শাসিত জাতি।
শাসক জাতি নিজেদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ছিল। উপনিবেশের বাসিন্দাদের তারা হীন জাতি বলে বিবেচনা করতো এবং তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিত।
জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার :
ইউরোপের ঔপনিবেশিক জাতিগুলি উপনিবেশগুলিতে নিজেদের সীমাহীন জাতিগত গৌরবের কথা প্রচার করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকালে ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস মিল মনে করতেন যে, ব্রিটিশ শাসনাধীনে অনুন্নত ভারতীয়দের মঙ্গল হচ্ছে। ভারতীয়দের স্বাধীনতাদানের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
শ্ৰেষ্ঠ জাতির প্রাধান্য :
সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি নিজ নিজ জাতিকে শ্রেষ্ঠ এবং উপনিবেশে শাসিত জাতিগুলিকে নিকৃষ্ট বলে মনে করত। পাশাপাশি নিকৃষ্ট জাতির ওপর শ্রেষ্ঠ জাতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্মগত অধিকার আছে বলে রাষ্ট্রগুলি ঘোষণা করত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের জাতিগত গর্বের কথা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে প্রচার করতো যে, "ব্রিটিশ জাতির সাম্রাজ্যে সূর্য কখনও অস্তমিত হয় না।”
শেতাঙ্গদের উন্নাসিকতা :
ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী জাতিগুলির বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, কৃষ্ণাঙ্গ জাতির চেয়ে শ্বেতাঙ্গ জাতির মানুষ অনেক বেশি উন্নত। এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষ কখনও শ্বেতাঙ্গদের সমকক্ষ হতে পারে না।
জাতিগত ব্যবধান :
উপনিবেশগুলিতে শাসক জাতি এবং শাসিত জাতির মধ্যে মর্যাদাগত ব্যবধান সহজেই চোখে পড়ে। উপনিবেশে বসবাসকারী জনজাতিগুলি নানা ধরনের ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চম্নার শিকার হলেও ঔপনিবেশিক জাতির মানুষজন বিভিন্ন ধরনের সুযোগসুবিধা লাভ করতো। শাসিত জাতি উচ্চহারে কর প্রদান করে, কায়িক শ্রম দান করে শাসক জাতির জীবনে বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে বাধ্য হয়।
সংস্কৃতিকে অবমাননা করা :
শাসক জাতি নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরে তা উপনিবেশের শাসিত জনসমাজে চাপিয়ে দেয়। ব্রিটিশ সরকার ভারতের সুপ্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাকে অত্যন্ত নিম্নমানের বলে নিন্দা করে এদেশে নিজেদের ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল।
বিকৃত জাতীয়তাবাদ :
ইউরোপের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে। এ ধরনের রাষ্ট্রের শাসকরা নিজেদের দেশ ও জাতিকে শ্রেষ্ঠতম বলে মনে করে এশিয়া ও আফ্রিকার অনগ্রসর জাতিগুলিকে পদানত করার উদ্যোগ নেয়।
সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ :
ইউরোপের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি নিজেদের লক্ষ্য ও স্বার্থকে জাতীয় লক্ষ্য ও স্বার্থের সমার্থক বলে প্রচার করে। এরূপ জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ নামে পরিচিত। এরূপ পুঁজিপতিরা পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে অন্ধ দেশপ্রেম ও সংকীর্ণ আত্মগৌরবের কথা প্রচার করে। আর এই আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই সেসব দেশ সাম্রাজ্যবাদ প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিল।
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇
File Name : ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার থেকে বড়ো ৮ নম্বরের প্রশ্ন
File Format : পিডিএফ
File Language : বাংলা
File Location : গুগল ড্রাইভ
Download Link : ডাউনলোড
---------------------------------------------------------------------------------
File Language : বাংলা
File Location : গুগল ড্রাইভ
Download Link : ডাউনলোড
---------------------------------------------------------------------------------