Join Telegram Join Facebook বাংলা রচনা
সাহিত্যের ইতিহাস সাজেশান Question-Paper
WBCS স্কুল নোটস ইতিহাস

বিভাব নাটক থেকে ৭টি বড়ো প্রশ্ন রচনাধর্মী প্রশ্ন ২০২২ শম্ভু মিত্র | দ্বাদশ শ্রেণি | Bivab Natok By Sambhu Mitra | Long Question Answer 2022 | PDF Download

বিভাব নাটক থেকে ৭টি বড়ো প্রশ্ন রচনাধর্মী প্রশ্ন ২০২২  শম্ভু মিত্র | দ্বাদশ শ্রেণি | Bivab Natok By Sambhu Mitra | Long Question Answer 2022 | PDF Download




যে প্রশ্নগুলি রয়েছে(toc)
















[প্রশ্ন] ‘বিভাব' নাটকে নাট্যরীতির যে নতুনত্ব প্রকাশ পেয়েছে, তা আলোচনা করো।

[উ] ‘বহুরূপী’ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা নাট্যকার শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব' নাটকে প্রচলিত নাট্যভাবনার বাইরে এক অভিনব নাট্যরীতি প্রয়োগ করা হয়েছে। নাটক অভিনয় চিরাচরিত রীতি, সাজসজ্জা ছাড়াও যে সম্ভব, তা এই নাটক পাঠে উপলব্ধি করা যায়।

নাট্যরীতির বিশেষত্ব

নাট্যকার ‘বিভাব নাটকে’ প্রথাগত নাট্যরীতি থেকে সরে এসে ভঙ্গিসর্বস্ব নাট্যরীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এক্ষেত্রে পুরোনো বাংলা নাটক, উড়ে যাত্রা, মারাঠি তামাশা, জাপানের কাবুকি থিয়েটার তাঁর প্রেরণার উৎস। সেইসঙ্গে নাটক উপস্থাপনার জন্য আবশ্যক উপকরণের অভাব সত্ত্বেও আঙ্গিক নির্ভরতায় ‘বিভাব’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।

ভঙ্গিসর্বস্ব এই নাট্যরীতিতে হাস্যোদ্দীপক মূকাভিনয়ের সংমিশ্রণ ঘটে। অমরের বাড়ির কড়া নাড়া, তাকানোর ভঙ্গিতে দোতলা বাড়ি বোঝানো, দরজা ঠেলা ও সিঁড়িতে ওঠার ভঙ্গি, কল্পিত জানালা খোলা, চেয়ারে বসা, সিগারেট ধরানো ও খাওয়ার ভঙ্গি, চায়ের কাপ গ্রহণ ও পানের ভঙ্গি, রবীন্দ্রসঙ্গীতে গাছের ডাল ধরার ভঙ্গি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূকাভিনয়ের অদ্ভুত প্রয়োগ ঘটেছে।

নাটকটিতে কাহিনি পরম্পরায় হাসির মধ্যে দিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়েছে সমকালীন অভাব-অনটন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার প্রভৃতিকে, যা নাটকটিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।



[প্রশ্ন] “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত 'অভাব' নাটক।‘ অভাবের চিত্র ‘বিভাব’ নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখো। [২০১৫]

[উ] শম্ভু মিত্রের পাঠ্য ‘বিভাব’ নাটকটির শুরুতে নাট্যকার নাটক অভিনয়ের কৈফিয়ত হিসেবে কিছু বলেন এবং সেখানেই উল্লেখ করেন যে, নাটকের প্রকৃত নাম কী হওয়া উচিত। ‘বিভাব’ নাটকের বিষয়বস্তুতে যে একান্ত অভাবের চিত্র ফুটে উঠেছে, তা পাঠকের মনে রসনিষ্পত্তির কারণ।

অভাবের চিত্র

বিশ শতকে বাংলা নাট্য আন্দোলনে অভিনয়রীতি এবং নাট্যশৈলীতে যে অভিনবত্ব আসে তার একটি বড়ো কারণ ছিল নাটক মঞ্চস্থ করার প্রয়োজনীয় অর্থ ও পরিকাঠামোর অভাব। নাটকের সুষ্ঠু উপস্থাপনা এবং একটি ভালো প্রযোজনার জন্য ভালো মঞ্চ, দৃশ্য-অনুযায়ী মঞ্চসজ্জা, আলোক প্রক্ষেপণের নান কৌশল। কিন্তু অর্থনৈতিক দীনতা নাটক অভিনয়ে একটি বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবু ভালো প্রযোজনার স্বার্থে নাটকের কলাকুশলীরা একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নাটক অভিনয় করতেন।

অনেকক্ষেত্রে নাটক মঞ্চস্থ করার প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় হলেও শান্তি নেই। কারণ সরকার নাটক প্রযোজনার জন্য ট্যাক্স নেবে। নাট্যকারের আপসোস, “তাঁরা পেশাদারের কাছে খাজনা নেন না। কিন্তু আমাদের কাছে নেন। কারণ , আমরা নাটক নিয়ে ব্যবসা করি না..।”

এই কারণেই শম্ভু মিত্র প্রথা ভেঙে নতুন আঙ্গিকের পরিকল্পনা করেন। সেই অভিনব নাট্যরীতিতে বড়ো মঞ্চ, মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যপট, বেশভূষা থাকবে না। আর্থিক অভাব নাটকের আঙ্গিকের ঐশ্বর্যে ঢেকে যাবে। ‘বিভাব’ নাটকের কাহিনিবস্তুতে আঙ্গিকের এই বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একারণে ‘বিভাব’ নাটকের ‘অভাব' নামকরণে নাট্যকারের বিদ্রুপ ও শ্লেষ ধ্বনিত হয়।



[প্রশ্ন] ‘তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।'— বক্তা কে? ভেবেচিন্তে কী প্যাঁচ বের করা হয়েছিল? সেই প্যাঁচের বুদ্ধিটা কীভাবে এসেছিল?

[অথবা] বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।‘—বুদ্ধিটি কী? কীভাবে তা বক্তার মাথায় এসেছিল?


[উ] বাংলা নাটকের বিশিষ্ট নাট্যকার শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা স্বয়ং শম্ভু মিত্র। উদ্ধ্রিত-অংশে ‘প্যাঁচ’ বা ‘বুদ্ধি’ বলতে নাটকে অভিনয়ের প্রয়োগকৌশলকে বোঝানো হয়েছে।

প্রথম অংশ—‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠীর তীব্র অর্থসংকটের সময় শম্ভু মিত্র এমন এক আঙ্গিকনির্ভর অভিনয়রীতির কথা ভাবেন যেখানে স্টেজ সিনসিনারি, দরজা-জানলা, টেবিল-বেঞ্চি কিছুর দরকার হবে না। অভিনয়ের জন্য কেবলমাত্র একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার।

দ্বিতীয় অংশ—'বহুরূপী' যখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত তখন তারা এক নতুন নাট্য-আঙ্গিক বেছে নিয়েছিলেন। ভালো মঞ্চ, মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যসজ্জা ছাড়াই নাটক অভিনয় করার এই রীতি অবশ্য কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। দেশি এবং বিদেশি উভয়ের গভীরেই এর শিকড় নিহিত ছিল।

নতুন নাট্যরীতি উদ্ভাবনের জন্য চারপ্রকার নাট্যরীতি তাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল।(১) পুরোনো বাংলা নাটকে–রথ বা ঘোড়া না থাকলেও রাজার রথে চড়ার ভঙ্গি নাট্যকারের প্রেরণা ছিল। (২) উড়ে যাত্রায়—রাজা দূতকে ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত খবর আনার নির্দেশ দিলে, দূত দ্রুত দু-পায়ের মাঝে লাঠি গলিয়ে এমনভাবে প্রস্থান ও প্রবেশ করে যাতে দর্শকরা বুঝে নেয় যে দূত ঘোড়ায় চড়ে এসেছে। (৩) মারাঠি তামাশায়—এক অসহায় চাষির প্রথমে জমিদারের কাছে, পরে কাল্পনিক মন্দিরের পুরোহিতের কাছে দুঃখ নিবেদন করা অথবা একই ব্যক্তির দর্শকের সামনেই সামান্য বেশ বদলে জমিদার ও পুরোহিতের অভিনয় শম্ভু মিত্রকে নতুন নাট্যশৈলীর ধারণা দেয়। (৪) জাপানি কাবুকি থিয়েটার সম্বন্ধে রুশ চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের লেখা পড়ে জাপানি থিয়েটারের ভঙ্গি সম্পর্কে জেনেছেন। সেখানে বিভিন্ন আকারের দুর্গদ্বারের মাধ্যমে পরিপার্শ্বিক রচনা, কল্পিত যুদ্ধ ও অঙ্গভঙ্গি করে মৃত্যুর দৃশ্য রচনা নাট্যকারকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।



[প্রশ্ন] “আর একবার এক মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম”—বক্তা মারাঠি তামাশায় কী দেখেছিলেন? বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে মারাঠি তামাশার কথা বলেছিলেন? [২০১৬]

[উ] প্রথম অংশ— ‘বিভাব’ নাটকের নাট্যকার শম্ভু মিত্র মারাঠি তামাশায় এক অভিনব নাট্যশৈলীতে দেখেন—মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যপট ছাড়াই নাটক জনমনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম।

মারাঠি তামাশায় তিনি দেখেছেন—দুর্ভাগ্যপীড়িত এক কৃষক জমিদারের কাছে অনুনয়-বিনয় করলেও, জমিদার বিচলিত হয় না। তখন হতাশ হয়ে কৃষক ভগবানের কাছে নালিশ জানাতে যায়। এক আশ্চর্য রীতিতে একটা তক্তার উপর উঠে, কয়েক পা ঘুরে সে বুঝিয়ে দেয় অনেকটা পথ সে অতিক্রম করে আসে। কাল্পনিক এক মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজের দুঃখ-বেদনার কথা নিবেদন করে। অন্যদিকে যে অভিনেতা জমিদারের ভূমিকায় অভিনয় করছিল, তাকেই এখন পুরোহিতের বেশে দেখা যায়। দর্শকের সামনেই মুখে দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে সে অভিনয় শুরু করে।

এই অভিনয়রীতিতে আপাত অসঙ্গতি দর্শকদের মনঃসংযোগে কোনো বিঘ্ন ঘটায় না। তামাশায় এই অভিনব নাট্যরীতির প্রয়োগ নাট্যকার শম্ভু মিত্রকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল।

দ্বিতীয় অংশ—‘বিভাব’ নাটকের শুরুতে নাট্যকার নাটক পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় একটা ভালো মঞ্চ, সিনসিনারি, আলো, ঝালর, ইত্যাদির অভাবের কথা বলেন। তাই স্বল্প খরচে নাট্যাভিনয়ের প্রসঙ্গে শম্ভু মিত্র মারাঠি তামাশার উল্লেখ করেছিলেন।







[প্রশ্ন] ‘এমনি সময় হঠাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম’—‘এমনি সময়’ বলতে কোন্ পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে? সাহেবের নাম কী? তিনি কী লিখেছিলেন? [২০২০]

[অথবা] “তাদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক কথা লিখেছেন”।–আইজেনস্টাইন সাহেব কে? তিনি কাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন? সেই অভিনয় দেখে তিনি কী লিখেছিলেন? [২০১৭]


[অথবা] “এই পড়ে বুকে ভরসা এল”—কী পড়ে কেন ভরসা এল?

[উ] প্রথম অংশ—আর্থিক অভাব এবং সরকারের খাজনার চাপে যখন দেশীয় নাটকের অভিনয় প্রায় বন্ধ হওয়ার দশা সেসময় নাট্যকার শম্ভু মিত্র অল্পখরচে, সাজসজ্জা আড়ম্বর বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অঙ্গভঙ্গিকে সহায় করে এক নতুন অভিনয় রীতির কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তাঁর সন্দেহ ছিল এরকম অভিনয় রীতি বিলিতি বায়োস্কোপ দেখা দর্শক মানবে কিনা। ‘এমনি সময়’ বলতে এই সময়কেই বোঝানো হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশ—এখানে যে সাহেবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি হলেন বিখ্যাত রুশ চিত্র পরিচালক আইজেনস্টাইন। তাঁর পুরো নাম সের্গেই আইজেনস্টাইন।

তৃতীয় অংশ—রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ‘কাবুকি’ থিয়েটার নামক জাপানি থিয়েটারে কলাকুশলীদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। আইজেনস্টাইন জাপানি কাবুকি থিয়েটারের কুশীলবদের অভিনয় দেখে লিখেছিলেন, তাদের নাটকে ভঙ্গির বহুল ব্যবহার আছে। নাইট বেরিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে শিফটার তৈরি করেন বিভিন্ন আকারের দুর্গদ্বার। এইভাবে মঞ্চে পরিবেশ রচিত হয়। আবার মঞ্চে যুদ্ধ হয় কাল্পনিক তরবারি দিয়ে এবং ভঙ্গির মাধ্যমেই মৃত্যুর দৃশ্য দেখানো হয়। এইভাবে কেবল ভঙ্গির মাধ্যমে নাটকের দৃশ্য কীভাবে বাস্তবসম্মত ও শিল্পসম্মত করে তোলা যায়, রুশ পরিচালক তা লিখেছেন।

চতুর্থ অংশ—ঔপনিবেশিক কলকাতায় সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে একধরনের অন্ধ পাশ্চাত্য অনুসরণ লক্ষ করা যায়। শিল্পরীতি বা শিল্পসৃষ্টি সাহেব বা পাশ্চাত্য পণ্ডিতমহলে প্রশংসিত না হলে তা দেশীয় সমালোচকদের কাছে গৃহীত হত না। যদিও শম্ভু মিত্র তাঁর নাটকের আঙ্গিক খুঁজে পেয়েছিলেন বিভিন্ন প্রাদেশিক নাটকে কিন্তু দেশজ শিল্প কতটা সমাদৃত হবে তা নিয়ে তাঁর যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি এই পরনির্ভরতার সংস্কারকে বিদ্রুপ করেই শম্ভু মিত্র বলেছেন—সাহেব যখন একে সার্টিফিকেট দিয়েছেন তখন কলকাতার সুধীমহলেও এই নাটক সাদরে গৃহীত হবে।



[প্রশ্ন] “পৃথিবীতে সবচেয়ে পপুলার জিনিস হচ্ছে প্রেম।“— ‘বিভাব’ নাটকে প্রেমের অভিনয়কে কেন্দ্র করে যে ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ করা যায়, তা সংক্ষেপে বিবৃত করো।

[উ] সূচনা—’বিভাব’ নাটকে নাট্যকার শম্ভু মিত্র শম্ভু চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে হাসির খোরাক সংগ্রহ করে, নাট্য উপস্থাপনার মাধ্যমে লোককে হাসাতে চেয়েছেন। কিন্তু হাসি অত সহজ বস্তু নয়। মানুষ অকারণে হাসতে পারে না। তাই নাটকের অপর চরিত্র অমর ‘হিউম্যান ইন্টারেস্ট’ বা ‘পপুলার অ্যাপিল’ আনা দরকার বলে মতপোষণ করেন নাটকে। তখন পৃথিবীতে সবচেয়ে পপুলার জিনিস কী?—এই প্রশ্ন উঠলে উত্তর আসে প্রেম। অতএব প্রেমের অভিনয়ের জন্য দরকার হয় ‘লভ সিন’।

ঘটনাপ্রবাহ

(১ম) নাটকের এই পর্যায়ে লভ সিনের প্রয়োজনীয় শর্ত নায়ক-নায়িকার দরকার হয়। ঠিক হয় শম্ভু নায়ক এবং বৌদি নায়িকা হবেন। ঘরটাকে রাস্তা ধরে নিয়ে ‘লভ সিনে’ নায়িকার কলেজ ফেরার পথে নায়ক কর্তৃক ধাক্কার প্রসঙ্গ আসে। দেখা যায় নায়কের এই ধাক্কা বউদিকে উত্তেজিত করে। নেপথ্যে প্লে-ব্যাক হিসাবে রবীন্দ্রনাথের ‘মালতী লতা দোলে’ গানটি শোনা যায়। কিন্তু সেই প্রেমের দৃশ্য তেমন জমে ওঠে না।

(২য়) পরবর্তী প্রেমের দৃশ্যটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বউদি বলেন—“এটা অন্যরকমের লভ সিন; প্রগ্রেসিভ লভ সিন।“ শম্ভু মিত্র এই পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত ‘underground political leader’ না হলে সেখানে গল্প ‘progressive’ হবে না। তাকে পালাতে উৎসাহ দেন বউদি। একসময় নাট্যঘন মুহূর্তে শম্ভুকে কল্পিত জানলা টপকে পালাতে হয়। শম্ভুর জন্য বউদির চোখে জল আসার ভঙ্গি আরোপিত হয়। প্রেম যেন কথা বলতে চায়, কিন্তু তা তেমন সাড়া ফেলে না। অবশেষে বউদি রাগ করে মঞ্চ ছেড়ে চলে যান।

এইভাবে দুটি প্রেমের দৃশ্যে তথাকথিত প্রেমের ভাবনা নিয়ে সমকালীন প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করেছেন।







[প্রশ্ন] “এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না”—‘জীবনকে উপলব্ধি' করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে তাঁর কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল ?

[অথবা ]”জীবন কোথায়?”—কে কাকে বলেছেন? বক্তা জীবনকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করেন ? [২০১৯]


[উ] প্রথম অংশ—বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা শম্ভু। জন রুচি অনুযায়ী হাসির নাটকের বিষয় সন্ধানে শম্ভু তাঁর সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলিকে নিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েন।

দ্বিতীয় অংশ—প্রেমের দৃশ্যের মাধ্যমেও যখন হাসির নাটকের খোরাক পাওয়া গেল না, তখন শম্ভু ও অমর চার দেওয়ালের বাইরে জীবনকে উপলব্ধি করতে বেরিয়ে পড়ে। বিশেষ নাট্যভঙ্গির মাধ্যমে তাদের সামনে একটা ব্যস্ত রাস্তার দৃশ্য উপস্থাপিত হয়। এক একজন ব্যক্তি কেউ একটি মোটরের, কেউ বাসের, কেউ হাত-রিকশার, কেউ ট্রামের ছবি নিয়ে মুখে আওয়াজ করতে করতে তাদের অতিক্রম করে যায়। অমর যেন বাসে চাপা পড়ছিলেন, তাকে টেনে সরিয়ে নিয়ে শম্ভু মিত্র বাসচালককে ধমকে ওঠেন।

এরপর রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা সমকালীন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ান। তাঁরা অন্ন ও বস্ত্রের দাবিতে একটা মিছিল এগিয়ে আসতে দেখেন। এইসময় পুলিশ এসে তাদের থামাতে গেলে শম্ভু ও অমর আত্মগোপন করেন।

তৃতীয় অংশ—জীবনের বাস্তবতায় তাঁরা প্রত্যক্ষ করেন যে, মিছিলকারীরা পুলিশের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে স্লোগান দিতে থাকে—“চাল চাই, কাপড় চাই”। এবং সেই মিছিলে একসময় পুলিশ গুলি চালায় ৷ যার ফলস্বরুপ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পুলিশ মার্চ করতে করতে চলে যায়। মঞ্চ লাল আলোয় ভরে যায়। অমর এসে আহত মেয়েটির মাথায় হাত দেন। শম্ভু মিত্র উপলব্ধি করেন, মন্বন্তর-উত্তীর্ণ দ্বিধাবিভক্ত বাঙালি জীবন উদ্বাস্তু সমস্যা ও খাদ্যসঙ্কটে জর্জরিত। সেখানে হাসির আর কোনো উপাদানই অবশিষ্ট নেই।






[প্রশ্ন] ‘বিভাব’ কথাটির সাধারণ অর্থ কী? ‘বিভাব’ নাটকটির নামকরণ কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ, আলোচনা করো।

[উ]

বিভাব কথার অর্থ : ভারতীয় অলংকারশাস্ত্রমতে বিভাব হল নাটকের রসনিষ্পত্তির কারণ। ‘নাট্যশাস্ত্র’ গ্রন্থে ভরত বলেন, বিভাব হল সেই হেতু যার জন্য দর্শকের মনে আনন্দ, দুঃখ, হাসি, রাগ ইত্যাদি অনুভূতির উদ্রেক হয়।

নামকরণ বিচার

নাট্যকারের উদ্দেশ্য : সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রের পণ্ডিতদের মতে বিভাবের কারণে নাটক দেখার পর দর্শকের মনে রসনিষ্পত্তি ঘটে। নাট্যকার শম্ভু মিত্র দর্শকের মনে সার্থকভাবে রসের উদ্রেক করতে চান বলে নাটকের ‘বিভাব’ নামকরণে নাট্যকারের প্রধান উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়।

নাটকের বিষয়বস্তু : দর্শকের মনোরঞ্জন হাসি, কান্না উভয় মাধ্যমেই হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে নাট্যকার এমন নাট্যবস্তু নির্বাচন করবেন যাতে তার আঙ্গিকরীতি আড়ম্বরহীন হয়। বাঙালির ‘কাঁদুনে জাত’-এর অপবাদ ঘোচাতে নাটকের প্রধান চরিত্র শম্ভু ‘হাসির খোরাক’ খুঁজতে অমর মিত্রের বাড়িতে এসে পৌঁছোন।

মানবিক আবেদনসমৃদ্ধ বিষয় খুঁজতে প্রেমের দৃশ্য, কখনও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এনেও হাস্যরস উদ্রেক হয় না। শেষপর্যন্ত বিষয়বস্তুর সন্ধানে প্রতিদিনের বাস্তব জগতের সম্মুখীন হয়ে শম্ভু ও অমর দেখে অন্নবস্ত্রের দাবিতে এগিয়ে আসা মিছিলের মুখ একজন প্রতিবাদী ছেলে পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে শম্ভুর বিদ্রুপাত্মক উক্তি ‘এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে?’

সার্থকতা বিচার : ‘বিভাব’ নাটক তার গতিপথের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পাঠকমনে সময়ের যন্ত্রণা আর বিভ্রান্তির যে কঠোর অভিঘাত আনে, তাতেই পাঠকের মনে বিশেষ ভাব ব্যঞ্জনার অনুভব ঘটে। তাই নাটকের ‘বিভাব' নামকরণ সার্থক এবং যথোপযুক্ত।




-------------------------------

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা থেকে অন্য প্রশ্ন

------------------------

ক্লাস ১২ এর অন্যান্য বিষয়ের লেখ

---------------------------

PDF Download Link নিচে

------------------------






আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন

👇👇👇👇


Join Telegram (demo)

Join Facebook (open)











------------------------------
------------------------------

Next Post Previous Post
1 Comments
  • PULAKESH DAS
    PULAKESH DAS April 23, 2022 at 3:45 PM

    খুব সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

Add Comment
comment url