Join Telegram Join Facebook বাংলা রচনা
সাহিত্যের ইতিহাস সাজেশান Question-Paper
WBCS স্কুল নোটস ইতিহাস

৭টি বড়ো প্রশ্ন রচনাধর্মী প্রশ্ন ভারতবর্ষ গল্প সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ | দ্বাদশ শ্রেণি | Bharatbarsa | Long Question Answer | PDF Download

৭টি বড়ো প্রশ্ন রচনাধর্মী প্রশ্ন  ভারতবর্ষ গল্প সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ | দ্বাদশ শ্রেণি | Bharatbarsa | Long Question Answer | PDF Download





যে যে প্রশ্নের উত্তর আছে(toc)


[১] “বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে রইল।“—বুড়ির চেহারা ও পোশাকের পরিচয় দাও। তার তপ্ত বালিতে পড়ে থাকার কারণ কী ? [২০১৭]


[উ]

প্রথম অংশের উত্তর—

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে আমরা যে বুড়ি চরিত্রটিকে পাই সে ছিল থুত্থুড়ে, কুঁজো, ভিখিরি। রাক্ষুসি তার চেহারা এবং একমাথা সাদা চুল। পরনে ছেঁড়া, নোংরা কাপড়; গায়ে তেলচিটে তুলোর কম্বল জড়ানো। হাতে বেঁটে লাঠি নিয়ে পিচের পথে ভিজতে ভিজতে বুড়ি দিব্যি একই তালে হেঁটে হেঁটে চা-দোকানে উপস্থিত হয়েছিল। অপরিচিত বুড়ির মুখ ক্ষয়ে গিয়ে বিকৃত হয়ে গেছে। সে মুখে সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন ফুটে উঠেছে। সকলে এই দুর্যোগে তার বেঁচেবর্তে থাকা নিয়ে যখন বিস্মিত তখনই বুড়ি চা-দোকানে ঢুকে চা চায়।

দ্বিতীয় অংশের উত্তর—

শীতকালের ‘পউষে বাদলা’র বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যেদিন আকাশ পরিষ্কার হয়, সেদিন গ্রামবাসীরা বুড়ির নিঃসাড় দেহ আবিষ্কার করে। তারা বটতলার খোঁদলে বুড়িকে চিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। অনেকবেলা পর্যন্ত তাকে অনড় দেখে চা-ওয়ালা জগা বললে—“নির্ঘাত মরে গেছে বুড়িটা।“

ক্রমে ভিড় বেড়ে যায়। কেউ ভাবে শেয়াল-কুকুরে ছিঁড়ে খাবে, গন্ধে টেকা যাবে না। কেউ কপাল ছুঁয়ে দেখে প্রচণ্ড ঠান্ডা, নাড়ির স্পন্দন নেই। গ্রামের চৌকিদার গ্রামবাসীদের পরামর্শ দেয়—“লদীতে ফেলে দিয়ে এসো। ঠিক গতি হয়ে যাবে-যা হবার!” বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মেনে বাঁশের চ্যাংদোলায় ঝুলিয়ে বুড়ির দেহ ফেলে আসা হয় নদীর চড়ায়।

গল্পের এই অংশটি মানুষের অমানবিকতাকেই ফুটিয়ে তোলে। গ্রামবাসীরা বুড়ি মারা গেছে জেনেও তার দেহ সৎকার না করে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে। মানুষের এই নির্দয় আচরণেই দেহ তপ্ত বালিতে পড়ে থাকে।



[২] “বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মানা হল”—চৌকিদার কী পরামর্শ দিয়েছিল? সেই পরামর্শ মেনে কী করা হয়েছিল ?


[উ] 

প্রথম অংশ—

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে গ্রামের প্রান্তে থুখুড়ে বুড়ির মৃতকল্প দেহ নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে গ্রামের লোকেদের মধ্যে সংশয় দেখা দিলে, চৌকিদার অবজ্ঞার সুরে বলে—“ফাঁপিতে এক ভিখিরি পটল তুলেছে, তার আবার থানা-পুলিশ!” তারপর চৌকিদার পরামর্শ দেয়, বুড়ির মৃতদেহ সনাক্ত করার জন্য থানায় খবর দিয়ে লাভ নেই। কারণ পাঁচ ক্রোশ দূর থেকে পুলিশ আসতে যে সময় লাগবে, তাতে মৃতদেহ পচে গন্ধ ছাড়বে। তাই চৌকিদার বুড়ির দেহ নদীতে ফেলে আসার পরামর্শ দেয়।

দ্বিতীয় অংশ—

চৌকিদারের নির্দেশে গ্রামের মানুষ বুড়ির মৃতকল্প দেহকে চ্যাংদোলায় ঝুলিয়ে মাঠ পেরিয়ে দু-মাইল দূরে নদীর চড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা বুড়ির মৃতদেহ বালিতে ফেলে রেখে আসে। তারপর সেই রোদে তপ্ত বালির উপর পড়ে থাকা মৃতদেহের উপর কখন ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নামবে তার জন্য দিগন্তে চোখ রেখে অপেক্ষা করতে থাকে।

[৩] “সময়টা ছিল শীতের”—রাঢ়বাংলার শীতের যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তা গল্প অনুসরণে লেখ।


[উ] 

সূচনা—

কথাকার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটির প্রেক্ষাপট রাঢ়বাংলা। গল্পটির মূল কাহিনি শীতকালের। গল্পের সূচনায় লেখক রাঢ়বাংলার শীতের গ্রাম্য-রূপ উপস্থাপন করেছেন।


শীতের রূপ এবং গ্রামের অবস্থা

কয়েকটি গ্রামের কেন্দ্রে অবস্থিত বাজারের উত্তরে যে বিশাল মাঠ, সেখান থেকে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে আসে সারাক্ষণ। এমন শীতেও মাঝে মাঝে দুর্যোগ উপস্থিত হয়। শীতের মেঘলা আকাশ থেকে শুরু হয় বৃষ্টি, এর ফলে শীত আরো তীব্র হয়। ভদ্রলোকের ভাষায় একে বলে ‘পউষে বাদলা’ ছোটোলোকে বলে ‘ডাওর’ । আবার এমন বর্ষণমুখর শীতের দিনে ঝড় শুরু হলে তাকে বলে ‘ফাপি’।

এই বিরূপ পরিস্থিতিতে পৌষ মাসে যখন ‘ফাঁপি’ আসে, তখনও মানুষের সব ধান মাঠে পড়ে। দুশ্চিন্তায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মানুষের মন। একটু উত্তাপ পাওয়ার জন্য গ্রামের মানুষ তখন এসে জড়ো হয় চায়ের দোকানে, ভিড় ও আড্ডা জমায়।

এই আড্ডার কারণ হল সময় কাটানো, ক্ষিপ্ত মেজাজের উপশম প্রচেষ্টা। চলে তর্কবিতর্ক, যার কোনো প্রসঙ্গ-অপ্রসঙ্গ নেই। দোকানকে কেন্দ্র করে মজলিশ ভালো জমে ওঠে। বাজারের ছোটো সীমার মধ্যে যে ক-টি চায়ের দোকান, গ্রাম-গঞ্জ থেকে একে একে সেখানে লোকসমাগম হয়। কথার ভিড়ে আত্মপ্রকাশ করে মুম্বইয়ের অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা গায়ক, কখনও ইন্দিরা গান্ধি, আবার কখনও মুখ্যমন্ত্রী কিংবা এমএলএ। এক-একসময় আসে সরা বাউরির প্রসঙ্গও। কথা কাটাকাটির জের যত বাড়ে, চা-ওয়ালার বিক্রিবাটাও তত বাড়ে। ধারের পরিমাণও বাড়তে থাকে। চা-ওয়ালার বাকি দিয়ে কৃপণতা করে না, কারণ সে জানে—পৌষ মাস ধানের মরশুম, 'আজ না হোক, কাল পয়সা পাবেই।‘ এরূপ মজলিশের দিনেই গল্পের ভিখিরি বুড়ির আগমন ঘটেছিল।




[৪] 'বচসা বেড়ে গেল’ – বচসার কারণ কী? এই বচসা কীভাবে সমাপ্ত হয়েছিল তার বিবরণ দাও। [অথবা] ‘দেখতে দেখতে প্রচন্ড উত্তেজনা ছড়াল চারিদিকে’—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচ্য ঘটনার বিবরণ দাও।


[উ] 

প্রথম অংশ—

উদ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। গল্পের কাহিনিতে পৌষের এক অকাল দুর্যোগের দিনে চা-দোকানে আড্ডার পরিবেশে আসে এক থুথুড়ে কুঁজো ভিখিরি বুড়ি। রাতে সে আশ্রয় নেয় এক বট গাছের তলায়, গাছের কোটরে।

দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরের দিন গ্রামবাসীরা আবিষ্কার করে বুড়ির নিঃসাড় দেহ এবং সকলে ভেবে নেয় যে সে মৃত। তার দেহকে হিন্দুরা চৌকিদারের পরামর্শে, বাঁশের চ্যাংদোলায় করে নদীর শুকনো চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে। ওইদিনই বিকেলে কিছু মুসলমান ওই একই চ্যাংদোলায় দেহটিকে আবার বাজারে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাদের বক্তব্য বুড়ি মুসলমান, তাকে কবর দিতে হবে। এই নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বেধে যায়।

দ্বিতীয় অংশ—

বুড়ির ধর্ম-পরিচয় বিষয়ে নানা সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির হতে থাকে। অনেকেই জানায়, বুড়ি বিড়বিড় করে 'আল্লা’ বা ‘বিসমিল্লা' বলছিল। খোদ গাঁয়ের মোল্লাসাহেব অকাট্য শপথে বলেন, ভোরের নমাজ সেরে তিনি যখন বাস ধরতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বুড়িকে স্পষ্ট কলমা পড়তে শুনেছেন। ব্যাপারটিকে ‘অসম্ভব' বলে উড়িয়ে দিয়ে ভটচাজমশাই বলেন– তিনিও ওই একই সময়ে বাস ধরতে যাওয়ার পথে বুড়িকে স্পষ্ট বলতে শুনেছেন, ‘শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি”। মোল্লাসাহেবের সপক্ষে সাক্ষ্য দিতে ফজলু সেখ বলে– “আমি স্বকর্ণে শুনেছি, বুড়ি লাইলাহা ইল্লাল্ল বলছে!” আর ভটচাজমশায়ের সপক্ষে নকড়ি নাপিত দিব্যি করে বলে— “আপন মনে বলছে 'হরিবোল, হরিবোল!” এরপর নিবারণ বাগদি যদি চেঁচিয়ে বলে 'মিথ্যে’, তো করিম ফরাজি আরও চেঁচিয়ে বলে 'খবরদার'। পরিষ্কার বোঝা যায় বুড়ির আপাত-মৃতদেহ দখল নিয়ে নিজ নিজ ধর্মের মানুষ দ্বন্দ্বে মেতে উঠেছে।

ক্রমে বচসা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে থাকে। উত্তেজনাপুর্ণ পরিবেশে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হতে থাকে ক্রমশ। দুই সশস্ত্র জনতার মাঝে চৌকিদার নিজেকে বিপন্নবোধ করে। অবশেষে মৃতকল্প বুড়ি উঠে বসলে জনতা অবাক হয়ে যায়। বৃদ্ধার কথায় জনতা বুঝতে পারে সাম্প্রদায়িক ধর্মই নয়, মানবধর্মই বড়।





[৫] “আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”—কোন্ প্রশ্নের উত্তরে বক্তা এ কথা বলেছেন? গল্পানুসারে বক্তব্যের মূলভাব লেখ।


[উ] 

প্রেক্ষিত—

দ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এক থুথুড়ে বুড়ির মৃতকল্প দেহের দখল নিয়ে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ বিবাদে লিপ্ত হয়। বিবাদ যখন সংগ্রামের রূপ নিতে চলেছে, তখন হঠাৎ বুড়ি নড়েচড়ে উঠে বসলে, তাকে জীবিত দেখে প্রথমে চৌকিদার, পরে দু-দিকের জনতা হতবাক হয়ে ‘বুড়ির ধর্ম কী’ সে বিষয়ে প্রশ্ন করে। এই প্রশ্নের উত্তরেই বুড়ি প্রশ্নের কথাগুলি বলে।

বক্তব্যের মূলভাব—

গল্পে যে থুথুড়ে রাক্ষুসি চেহারার বৃদ্ধাকে লেখক উপস্থাপিত করেছেন, তার নাম-সম্প্রদায়-জাতধর্মের কোনো প্রসঙ্গ তিনি আনেননি। কিন্তু গল্পে তিনি ভারতের পরস্পর বিবাদমান দুই ধর্মসম্প্রদায় হিন্দু-মুসলমানকে জোরালোভাবে উপস্থাপিত করেছেন। বৃদ্ধাকে একদিন সকালে নিঃসাড় অবস্থায় কিছু মানুষ এক বট গাছের কদমাক্ত খোঁদলে আবিষ্কার করে। ধরে নেয় সে মারা গেছে। সরকারি আইনরক্ষক চৌকিদারের পরামর্শে হিন্দুরা তাকে বাঁশের চ্যাংদোলায় নিয়ে ফেলে আসে নদীর চড়ায়। বিকেলে মুসলমানরা ওই একই চ্যাংদোলায় করে তাকে তুলে আনে বাজারে। গাঁয়ের মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশায়ের ক্রমাগত উসকানিতে বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিবাদ শুরু হয়। ঘটনা যখন চরমে পৌঁছোয় তখনই বুড়ি নড়েচড়ে উঠে বসে। এবং প্রমাণিত হয় সে মরেনি।

বৃদ্ধার মুখের ব্যঙ্গমিশ্রিত ও জিজ্ঞাসাসূচক কথাগুলি আসলে লেখকের। তিনি বলতে চেয়েছেন, মানুষ মানুষই। সম্প্রদায় বা ধর্মগত স্বরূপ-পরিচয় ততটা মূল্যবান নয়। হিন্দু, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো ধর্ম নয়, মানুষের আসল পরিচয় সে মানুষ। মানবিকতাই তার ধর্ম। তাই মানুষ পরিচয়টিকেই জীবনে প্রধান মূল্য দেওয়া উচিত।



[৬] “শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল।“—কার কথা বলা হয়েছে? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেন? [২০১৫]


[উ] 

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি—

উদ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। শেষ রোদের আলোয় যার দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, সে হলো আলোচ্য গল্পের নাম-ধর্মপরিচয়হীন এক থুত্থুড়ে বুড়ি।

বক্তব্য—

গল্পশেষের উদ্ধৃতিটি নিঃসন্দেহে ব্যঞ্জনাময়। গল্পের কাহিনিবিন্যাসে দেখি রাঢ়বঙ্গের শীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এক থুত্থুড়ে বুড়ি বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। তারপর ‘ফাঁপি'র প্রবলতার মধ্যেই বট গাছের খোঁদলে রাত্রিযাপন করে। এরপর মেঘমুক্ত সকালে সেখানে নিথর বুড়িকে দেখে লোকজন অনুমান করে নেয় যে সে মৃতা। এই কল্পমৃত্যুর পটভূমিতেই লেখক আনয়ন করেন ভারতের পারস্পরিক ধর্মদ্বন্দ্বে উৎসুক মানুষজনদের। হিন্দু-মুসলমান একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে, দ্বন্দ্বযুদ্ধে মেতে ওঠে।

দ্বন্দ্ব যখন চরম সীমায় পৌঁছেছে তখনই লেখক বুড়িকে পুনর্জাগরিত করেন। শুধু তাই নয়—দুই লড়াকু সম্প্রদায়ের নির্বোধ মানুষজনদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসার উপর নির্ভীক বুড়ির চলে যাওয়া দেখান। এর মধ্যে দিয়ে লেখক প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অসারতার প্রতি তীব্র অবজ্ঞা ছুঁড়ে দিয়েছেন লেখক। মানুষ মানবতা ধারণ করুক—এই লেখকের প্রত্যাশা। তথাকথিত ধার্মিকজন জীবিত, বিপন্ন মানুষকে বাঁচার প্রেরণা দেয় না। কিন্তু মৃত মানুষের ধর্মপ্রমাণে সশস্ত্র হয়ে লড়াই করে। তাই বুড়ির ‘দূরের দিকে ক্রমশ আবছা’ হয়ে যাওয়া যেন মানুষের মানবিক সত্তার, নৈতিকতার অবনমনকেই উপস্থাপিত করে।



[৭] বুড়িকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সূচনা হয়েছিল তার পরিচয় দাও। বুড়ি পুনরায় বেঁচে ওঠার মাধ্যমে কী শিক্ষা দিয়েছিল তা লেখ।


[উ] 

প্রথম অংশ—

বিশিষ্ট ছোটোগল্পকার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর ‘ভারতবর্ষ' গল্পে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের অবতারণা করেছেন। কিন্তু গল্পে এক থুথুড়ে বুড়ির মৃত্যু হয়েছে অনুমান করে তাকে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসা হয়।

বলাবাহুল্য, হিন্দু লোকজন সকালে এই মৃতদেহ ফেলে আসে এবং বিকেলে মুসলমানপাড়ার মানুষজন আবার তাকে বাজারে ফিরিয়ে এনে দাবি করে সে মুসলমান। বুড়ির মৃতকল্প দেহকে নিয়ে এরপর বাজারে প্রবল উত্তেজনা ও যুক্তি-প্রতিযুক্তির চাপানউতোর শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে যারা চা-দোকানে জড়ো হয়েছিল তারাই তখন একদিকে মোল্লাসাহেব এবং অন্যদিকে ভটচাজমশাইকে নিয়ে বুড়ির মৃতদেহ অধিকারে সচেষ্ট হয়। বুড়ি ধর্ম পরিচয় প্রমাণে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে তাদের মিথ্যেকথা। লেখক এখানে ভারতের ধর্মীয় সংকীর্ণতার রূপটিকে উন্মোচিত করেছেন।

মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশাই যে উত্তেজনার পত্তন করেন, তা ক্রমে ধর্মীয় মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তারপর দেখা যায় লোকেরা বুড়ির মড়াবাঁধা চ্যাংদোলাটা নিয়ে টানাটানি করছে, মানুষের হাতে উঠে এসেছে মারাত্মক সব অস্ত্রশস্ত্র। একসময় দেখা যায় মোল্লাসাহেব এবং ভটচাজমশাই নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মানুষদের উত্তেজিত করে তুলছেন। এবং এই ধুন্ধুমার গর্জন-প্রতিগর্জনের মধ্যে দাঁড়িয়ে সরকারি প্রতিনিধি চৌকিদার অবস্থা সামাল দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

দ্বিতীয় অংশ—

‘ভারতবর্ষ’ গল্পে গ্রামের মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশাইকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষ যে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, লেখক তার কোনো সমাধান করেন না। গ্রামের মানুষ বুড়ির মানবিক পরিচয়ের আগে তার ধর্মীয় পরিচয় অনুসন্ধানে যেভাবে ব্যগ্র হয়ে ওঠে তাতে মানবিকতার অবনমন ঘটে। লেখক বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বুড়ির প্রতিক্রিয়া দেখান। যেন বুড়ি ধর্মীয় অসাড়তাকে দু’পায়ে মাড়িয়ে দূরে মিলিয়ে যায়। এভাবেই গল্পে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের বাতাবরণে লেখক শেষপর্যন্ত মানবতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন।

 


-------------------------------

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা থেকে অন্য প্রশ্ন

------------------------

ক্লাস ১২ এর অন্যান্য বিষয়ের লেখ

---------------------------

PDF Download Link নিচে

------------------------


Go Home (info)




আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন

👇👇👇👇


Join Telegram (demo)

Join Facebook (open)





---------------------

PDF LINK

----------------------

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Unknown
    Unknown December 9, 2021 at 4:55 PM

    Thanks

Add Comment
comment url