পথের দাবী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর ২০২২ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Pather Dabi Galper Descriptive Question 2022 Answer pdf download
পথের দাবী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর ২০২২ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Pather Dabi Galper Descriptive Question 2022 Answer pdf download
[১] “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে”–বাবুটি’ কে? তার স্বাস্থ্যের বর্ণনা দাও।
[উ] শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী' উপন্যাসের অন্তর্গত ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে। বাবুটি বলতে সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের কথা এখানে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যের বর্ণনা = পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনে পুলিশকর্তা নিমাইবাবুর সামনে উপস্থিত করানো হয়। ত্রিশ-বত্রিশ বছর বয়সি সব্যসাচীকে যখন আনা হয় তখন প্রবল কাশির আধিক্য লক্ষ করা গেল। তার উজ্জ্বল গৌরবর্ণ রোদে তামাটে হয়ে গেছে এবং প্রবল কাশির কারণে তিনি অত্যন্ত হাঁপিয়ে ওঠেন।ভগ্নস্বাস্থ্যের গিরীশ মহাপাত্রকে দেখলে মনে হয়, একটা দুরারোগ্য রোগ যেন তাঁকে প্রবলভাবে গ্রাস করতে চায়।
রুগ্ন শরীরে প্রবল ব্যতিক্রমী হলো তাঁর উজ্জ্বল চোখগুলি। গিরীশের উজ্জ্বল চোখের অদ্ভুত দৃষ্টি তাঁর ক্ষীণ প্রাণশক্তিকে উপেক্ষা করে জীবনের আবেগকে যেন ব্যক্ত করে। ভগ্নস্বাস্থ্যের গিরীশ মহাপাত্রকে রেঙ্গুনে দেখে দারোগা নিমাইবাবু অপূর্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন এই বাঙালি বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে।
[২] “এতক্ষণে অপূর্ব তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।”--‘তাহার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও।
[উ] অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্তর্গত ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গৃহীত এই অংশে ‘তাহার’ বলতে রেঙ্গুনে আসা বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।
পরিচ্ছদের বর্ণনা = ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরোধিতা করা সব্যসাচী বর্মায় এসেছেন খবর পেয়ে দারোগা নিমাইবাবু সক্রিয় হন। পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে যখন রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনে আনা হয় তখন তাঁর ভগ্নপ্রায় নিস্তেজ স্বাস্থ্য দেখেন নিমাইবাবু। সেখানে অন্য কাজে উপস্থিত অপূর্বও তাঁকে লক্ষ করেন।
নিজেকে গিরীশ মহাপাত্র বলে পরিচয় দেওয়া সব্যসাচীর বিচিত্র সাজসজ্জা অপূর্বের মনে কৌতুকের সৃষ্টি করে। গিরীশের মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও অত্যন্ত ছোটো করে কাটার জন্য ঘাড় ও কানের দিক প্রায় কেশ শূন্য বলে মনে হয়। মাথায় চেরা সিঁথিতে তেলের অপ্রতুলতার জন্য রুক্ষ কেশদাম দেখা যায়। সেই কঠিন রুগ্ন কেশ থেকে নেবুর তেলের গন্ধ বের হয়ে অদ্ভুত এক পরিবেশ তৈরি করে।
গিরীশের পরিধানে রয়েছে রামধনু রং-এর জাপানি সিল্কের পাঞ্জাবি। সেই পাঞ্জাবির বুকপকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। গিরীশের পায়ে রয়েছে সবুজ রং-এর ফুল মোজা, হাঁটুর ওপরে লাল ফিতা দিয়ে তা বাঁধা, বার্নিশ করা ‘পাম্প শ্যু’র তলাটা মজবুত করতে চেয়ে লোহার নাল দিয়ে তা বাঁধানো। গিরীশের হাতে ছিল হরিণের শিং-এর হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। গিরীশের এই বিচিত্র পোশাক-পরিচ্ছদ অপূর্বের কাছে কৌতুকর হয়ে ওঠে।
[৩] ‘বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে'—বাবুটি কে? তাঁর সাজসজ্জার পরিচয় দাও। (২০১৭)
[উ] কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশে উল্লিখিত বাবুটি গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক।
সাজসজ্জা = বর্মা-ওয়েল-কোম্পানির তেলের খনির কারখানার মিস্ত্রি গিরীশ মহাপাত্র চেহারার দিক থেকে যেমন রোগা তেমনি দুর্বল। তবে তাঁর সাজ-পোশাকের শৌখিনতা বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। তাঁর মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকে চুল একেবারে নেই বললেই চলে। মাথায় চেরা সিঁথি। কঠিন ও রুগ্ণ চুলে লেবুর তেল ঢেলেছেন অপর্যাপ্ত পরিমাণে। তার নিদারুণ গন্ধে ঘর ভরে উঠেছে ৷ গায়ে তাঁর জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবিটির বুক পকেটে বাঘ-আঁকা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। উত্তরীয় নেই। পরনে বিলিতি মিলের কালো মকমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে সবুজ রং-এর ফুলমোজা। হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে মোজা বাঁধা হয়েছে। বার্নিস করা পাম্প শু। এর তলাটা মজবুত ও টেকসই করার জন্য আগাগোড়া লোহার নাল দিয়ে বাঁধানো। হাতে একগাছি হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। দিন কয়েকের জাহাজের ধকলে সবকিছুই নোংরা হয়ে উঠেছে।
[৪] ‘কই এ ঘটনা তো আমাকে আগে বলেন নি?"—ঘটনাটি কী? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কেন বক্তাকে তা বলেন নি?
[উ] প্রথম অংশ = কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের বাঙালি যুবক অপূর্ব রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে একবার ফিরিঙ্গিদের বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের শিকার হয়ে বড়ো লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়েছিলেন। কতকগুলি ফিরিঙ্গি ছেলে বিনা দোষে তাঁকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন স্টেশন মাস্টারের কাছে। স্টেশন মাস্টার সেই অপরাধের গুরুত্ব বিচার না করে বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় দেন। দেশি লোক হয়ে অপূর্ব ফিরিঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, এটাকে সহ্য করতে না পেরে তিনি তাঁকে কুকুরের মতো দূর করে দেন স্টেশন থেকে। এখানে এই ঘটনার কথাই বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশ = ঘটনাটি অপূর্ব তাঁর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরকে আগে বলেননি। বলা সহজও নয়। এ ঘটনা যেমন দুঃখজনক তেমনি অপমানকর। অপূর্বের লজ্জা আরও বেড়ে গেছে স্টেশনে উপস্থিত অন্যান্য হিন্দুস্থানিদের মনোভাব জেনে। এই অপমানটা কারও গায়ে লাগেনি। অপমান সহ্য করা তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। ফিরিঙ্গি ছেলেদের লাথির চোটে অপূর্বের হাড়-পাঁজরা ভেঙে যায়নি শুনেই তারা খুশি হয়েছিল। ঘটনা মনে হলে অপূর্ব নিজেই মাটির সঙ্গে মিশে যান। তাই রামদাসকে বলেননি।
[৫] ‘পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল।”—‘পথের দাবী' পাঠ্যাংশে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে কী জানা যায়? তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কী পরিস্থিতি তৈরি হয়?
[উ] প্রথম অংশ = অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে জানা যায় যে, গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে তিনি রেঙ্গুনে উপস্থিত হয়েছেন সাধারণ শ্রমজীবী হিসেবে। পুলিশস্টেশনে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে পুলিশের বড়োকর্তা নিমাইবাবুর সামনে উপস্থিত করা হয়। শীর্ণ ও অত্যন্ত দুর্বল মানুষটির বিচিত্র পোশাক ও উপস্থিতি এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করে। গিরীশ মহাপাত্রের মাথার সামনের দিকে রয়েছে বড়ো চুল, ঘাড় ও কানের দিকের চুল ছোটো করে ছাঁটা। মাথায় চেরা সিঁথি ও সেখান থেকে লেবুর তেলের উৎকট গন্ধ অভূতপূর্ব এক পরিবেশ তৈরি করে। পরিধানে রয়েছে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। এ ছাড়া বিলাতি মিলের কালো মখমলের সূক্ষ্ম শাড়ি, সবুজ মোজা, বার্নিশ করা পাম্প-শু চরিত্রটিকে বিচিত্র করে।
দ্বিতীয় অংশ = বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল চোখের অধিকারী বছর তিরিশ-বত্রিশের শীর্ণ গিরীশ মহাপাত্রের মাথা থেকে নির্গত লেবুর তেলের উৎকট গন্ধে পুলিশ কর্মীদের মাথা ধরে যায়। নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের হাতে গঞ্জিকা সেবনের নিদর্শন দেখলেও সে অবলীলায় গাঁজা খাওয়ার কথা অস্বীকার করে। অবলীলায় গিরীশ মহাপাত্র বলে যে, সে অন্যের প্রয়োজনে গাঁজার কলকে সাজিয়ে দেয়। এককথায় গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক-সাজসজ্জা দেখে, তার শিক্ষার পরিচয় পেয়ে কেউই তাঁকে সব্যসাচী হিসাবে সন্দেহ করে না। অপূর্ব নিজেই জানিয়েছিল—‘যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।’
দশম শ্রেণির বাংলা অন্যান্য লেখা
- জ্ঞানচক্ষু [প্রশ্ন উত্তর]
- অসুখী একজন [প্রশ্ন উত্তর]
- আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি [প্রশ্ন উত্তর]
- আফ্রিকা [প্রশ্ন উত্তর]
- হারিয়ে যাওয়া কালি কলম [প্রশ্ন উত্তর]
- বহুরূপী [প্রশ্ন উত্তর]
- অভিষেক [প্রশ্ন উত্তর]
- সিরাজদৌল্লা [প্রশ্ন উত্তর]
- প্রলয়োল্লাস [প্রশ্ন উত্তর]
- পথের দাবী [প্রশ্ন উত্তর]
- সিন্ধুতীরে [প্রশ্ন উত্তর]
- অদল বদল [প্রশ্ন উত্তর]
- অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান [প্রশ্ন উত্তর]
- বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান [প্রশ্ন উত্তর]
- নদীর বিদ্রোহ [প্রশ্ন উত্তর]
- কোনি [প্রশ্ন উত্তর]
-------------------------------
পিডিএফ লিঙ্ক নিচে
----------------------------
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇
-----------------------------------
-----------------------------------