Join Telegram Join Facebook বাংলা রচনা
সাহিত্যের ইতিহাস সাজেশান Question-Paper
WBCS স্কুল নোটস ইতিহাস

পথের দাবী গল্পের 20+ রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর ২০২৪ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Pather Dabi Galper 20+ Descriptive Question 2024 Answer pdf download

প্রিয় শিক্ষার্থীরা,


আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো পথের দাবী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর || বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পথের দাবী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর লিখতে হয়, প্রশ্নমান ৫  || | Madhyamik Bengali Pather Dabi by Saratchandra Chattopadhyay  | 10th Standard | এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।





Join Our Telegram Channel





পথের দাবী গল্পের 20+ রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর ২০২৪  | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |  Pather Dabi Galper 20+ Descriptive Question 2024 Answer pdf download



পথের দাবী
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্নমান = ৫




[১] “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে”–বাবুটি’ কে? তার স্বাস্থ্যের বর্ণনা দাও।


[উ] শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী' উপন্যাসের অন্তর্গত ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে। বাবুটি বলতে সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের কথা এখানে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্যের বর্ণনা = পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনে পুলিশকর্তা নিমাইবাবুর সামনে উপস্থিত করানো হয়। ত্রিশ-বত্রিশ বছর বয়সি সব্যসাচীকে যখন আনা হয় তখন প্রবল কাশির আধিক্য লক্ষ করা গেল। তার উজ্জ্বল গৌরবর্ণ রোদে তামাটে হয়ে গেছে এবং প্রবল কাশির কারণে তিনি অত্যন্ত হাঁপিয়ে ওঠেন।ভগ্নস্বাস্থ্যের গিরীশ মহাপাত্রকে দেখলে মনে হয়, একটা দুরারোগ্য রোগ যেন তাঁকে প্রবলভাবে গ্রাস করতে চায়।

রুগ্ন শরীরে প্রবল ব্যতিক্রমী হলো তাঁর উজ্জ্বল চোখগুলি। গিরীশের উজ্জ্বল চোখের অদ্ভুত দৃষ্টি তাঁর ক্ষীণ প্রাণশক্তিকে উপেক্ষা করে জীবনের আবেগকে যেন ব্যক্ত করে। ভগ্নস্বাস্থ্যের গিরীশ মহাপাত্রকে রেঙ্গুনে দেখে দারোগা নিমাইবাবু অপূর্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন এই বাঙালি বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে।



[২] “এতক্ষণে অপূর্ব তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।”--‘তাহার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও।


[উ] অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্তর্গত ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গৃহীত এই অংশে ‘তাহার’ বলতে রেঙ্গুনে আসা বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।

পরিচ্ছদের বর্ণনা = ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরোধিতা করা সব্যসাচী বর্মায় এসেছেন খবর পেয়ে দারোগা নিমাইবাবু সক্রিয় হন। পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে যখন রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনে আনা হয় তখন তাঁর ভগ্নপ্রায় নিস্তেজ স্বাস্থ্য দেখেন নিমাইবাবু। সেখানে অন্য কাজে উপস্থিত অপূর্বও তাঁকে লক্ষ করেন।

নিজেকে গিরীশ মহাপাত্র বলে পরিচয় দেওয়া সব্যসাচীর বিচিত্র সাজসজ্জা অপূর্বের মনে কৌতুকের সৃষ্টি করে। গিরীশের মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও অত্যন্ত ছোটো করে কাটার জন্য ঘাড় ও কানের দিক প্রায় কেশ শূন্য বলে মনে হয়। মাথায় চেরা সিঁথিতে তেলের অপ্রতুলতার জন্য রুক্ষ কেশদাম দেখা যায়। সেই কঠিন রুগ্ন কেশ থেকে নেবুর তেলের গন্ধ বের হয়ে অদ্ভুত এক পরিবেশ তৈরি করে।

গিরীশের পরিধানে রয়েছে রামধনু রং-এর জাপানি সিল্কের পাঞ্জাবি। সেই পাঞ্জাবির বুকপকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। গিরীশের পায়ে রয়েছে সবুজ রং-এর ফুল মোজা, হাঁটুর ওপরে লাল ফিতা দিয়ে তা বাঁধা, বার্নিশ করা ‘পাম্প শ্যু’র তলাটা মজবুত করতে চেয়ে লোহার নাল দিয়ে তা বাঁধানো। গিরীশের হাতে ছিল হরিণের শিং-এর হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। গিরীশের এই বিচিত্র পোশাক-পরিচ্ছদ অপূর্বের কাছে কৌতুকর হয়ে ওঠে।



[৩] ‘বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে'—বাবুটি কে? তাঁর সাজসজ্জার পরিচয় দাও। (২০১৭)


[উ] কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃত এই অংশে উল্লিখিত বাবুটি গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক।

সাজসজ্জা = বর্মা-ওয়েল-কোম্পানির তেলের খনির কারখানার মিস্ত্রি গিরীশ মহাপাত্র চেহারার দিক থেকে যেমন রোগা তেমনি দুর্বল। তবে তাঁর সাজ-পোশাকের শৌখিনতা বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। তাঁর মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকে চুল একেবারে নেই বললেই চলে। মাথায় চেরা সিঁথি। কঠিন ও রুগ্‌ণ চুলে লেবুর তেল ঢেলেছেন অপর্যাপ্ত পরিমাণে। তার নিদারুণ গন্ধে ঘর ভরে উঠেছে ৷ গায়ে তাঁর জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবিটির বুক পকেটে বাঘ-আঁকা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। উত্তরীয় নেই। পরনে বিলিতি মিলের কালো মকমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে সবুজ রং-এর ফুলমোজা। হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে মোজা বাঁধা হয়েছে। বার্নিস করা পাম্প শু। এর তলাটা মজবুত ও টেকসই করার জন্য আগাগোড়া লোহার নাল দিয়ে বাঁধানো। হাতে একগাছি হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। দিন কয়েকের জাহাজের ধকলে সবকিছুই নোংরা হয়ে উঠেছে।



[৪] ‘কই এ ঘটনা তো আমাকে আগে বলেন নি?"—ঘটনাটি কী? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কেন বক্তাকে তা বলেন নি?


[উ] প্রথম অংশ = কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের বাঙালি যুবক অপূর্ব রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে একবার ফিরিঙ্গিদের বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের শিকার হয়ে বড়ো লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়েছিলেন। কতকগুলি ফিরিঙ্গি ছেলে বিনা দোষে তাঁকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন স্টেশন মাস্টারের কাছে। স্টেশন মাস্টার সেই অপরাধের গুরুত্ব বিচার না করে বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় দেন। দেশি লোক হয়ে অপূর্ব ফিরিঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, এটাকে সহ্য করতে না পেরে তিনি তাঁকে কুকুরের মতো দূর করে দেন স্টেশন থেকে। এখানে এই ঘটনার কথাই বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশ = ঘটনাটি অপূর্ব তাঁর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরকে আগে বলেননি। বলা সহজও নয়। এ ঘটনা যেমন দুঃখজনক তেমনি অপমানকর। অপূর্বের লজ্জা আরও বেড়ে গেছে স্টেশনে উপস্থিত অন্যান্য হিন্দুস্থানিদের মনোভাব জেনে। এই অপমানটা কারও গায়ে লাগেনি। অপমান সহ্য করা তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। ফিরিঙ্গি ছেলেদের লাথির চোটে অপূর্বের হাড়-পাঁজরা ভেঙে যায়নি শুনেই তারা খুশি হয়েছিল। ঘটনা মনে হলে অপূর্ব নিজেই মাটির সঙ্গে মিশে যান। তাই রামদাসকে বলেননি।



[৫] ‘পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল।”—‘পথের দাবী' পাঠ্যাংশে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে কী জানা যায়? তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কী পরিস্থিতি তৈরি হয়?


[উ] প্রথম অংশ = অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে জানা যায় যে, গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে তিনি রেঙ্গুনে উপস্থিত হয়েছেন সাধারণ শ্রমজীবী হিসেবে। পুলিশস্টেশনে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে পুলিশের বড়োকর্তা নিমাইবাবুর সামনে উপস্থিত করা হয়। শীর্ণ ও অত্যন্ত দুর্বল মানুষটির বিচিত্র পোশাক ও উপস্থিতি এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করে। গিরীশ মহাপাত্রের মাথার সামনের দিকে রয়েছে বড়ো চুল, ঘাড় ও কানের দিকের চুল ছোটো করে ছাঁটা। মাথায় চেরা সিঁথি ও সেখান থেকে লেবুর তেলের উৎকট গন্ধ অভূতপূর্ব এক পরিবেশ তৈরি করে। পরিধানে রয়েছে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। এ ছাড়া বিলাতি মিলের কালো মখমলের সূক্ষ্ম শাড়ি, সবুজ মোজা, বার্নিশ করা পাম্প-শু চরিত্রটিকে বিচিত্র করে।

দ্বিতীয় অংশ = বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল চোখের অধিকারী বছর তিরিশ-বত্রিশের শীর্ণ গিরীশ মহাপাত্রের মাথা থেকে নির্গত লেবুর তেলের উৎকট গন্ধে পুলিশ কর্মীদের মাথা ধরে যায়। নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের হাতে গঞ্জিকা সেবনের নিদর্শন দেখলেও সে অবলীলায় গাঁজা খাওয়ার কথা অস্বীকার করে। অবলীলায় গিরীশ মহাপাত্র বলে যে, সে অন্যের প্রয়োজনে গাঁজার কলকে সাজিয়ে দেয়। এককথায় গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক-সাজসজ্জা দেখে, তার শিক্ষার পরিচয় পেয়ে কেউই তাঁকে সব্যসাচী হিসাবে সন্দেহ করে না। অপূর্ব নিজেই জানিয়েছিল—‘যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।’



[৬]  আমি ভীরু কিন্তুু তাই বলে অবিচারের দণ্ড ভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না রামদাস। — বক্তা কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? তিনি কোন অবিচারের দন্ড ভোগ করেছেন?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এখানে অন্যতম চরিত্ররূপে অপূর্ব রেঙ্গুনে এসে পরিচিত হয়েছে রামদাস তলওয়ারকরের সঙ্গে। তার সঙ্গে বিপ্লবী সব্যসাচীর প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে অপূর্ব নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এবং তার মনে পড়ে যায় প্ল্যাটফর্মে ফিরিঙ্গি ছেলেদের দ্বারা এবং স্টেশন মাস্টার মশায়ের দ্বারা লাঞ্ছিত এবং অপমানিত হওয়ার কথা। তাই এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

অপূর্ব একদিন কতগুলি ফিরিঙ্গি ছেলের দ্বারা বিনা দোষে লাঞ্চিত হন। ছেলেগুলি তাকে লাথি মেরে প্লাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। এই লাঞ্ছনা এবং অপমানের প্রতিবাদ জানাতে অপূর্ব ছুটে গিয়েছিলেন স্টেশন মাস্টারের কাছে। কালো চামড়া দেশি লোকের প্রতি তার অন্তরের ঘৃণাবোধকে উগ্র করে তোলেন। তিনি তাকে কুকুরের মত দূর করে দেন স্টেশন থেকে।

—-----------------------------------------------------


[৭] শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী গদ্যাংশে অবলম্বনের অপূর্ব চরিত্র বিশ্লেষণ করো?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এই রচনাংশে বর্ণিত রেঙ্গুনে আগত শিক্ষিত বাঙালি যুবক অপূর্বের কতগুলি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

  • (ক) পরাধীনতার যন্ত্রণা তাকেও কুরে কুরে খায়। একসময় তিনি স্বদেশী আন্দোলনের যোগ দিয়েছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি তার আন্তরিক শ্রদ্ধা ভক্তি স্বদেশপ্রাণ হৃদয়টিকে উজ্জ্বল করে তোলে।
  • (খ) স্টেশন মাস্টারের বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের কথা তিনি ভাবেন। নিজেকে ভীরু বলে মেনে নিয়েও তিনি হিন্দুস্তানি লোকের অপমান সহ্য করার মনোবৃত্তিকে সহ্য করতে পারেন না।
  • (গ) তিনি জানিয়েছেন, ফিরিঙ্গি ছেলেদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ভামো নগরে যাত্রার সময় ট্রেনে পুলিশ অন্যায় ভাবে বারবার তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে তিনি তার প্রতিবাদ করেছিলেন।
  • (ঘ) অপূর্ব ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত এ দেশের প্রশাসনিক পদে আসীন মানুষের প্রতি তিনি সন্তুুষ্ট নন। কিন্তু তার জন্য সৌজন্যবোধ বিসর্জন তিনি দেন। অপরদিকে এক ক্রিশ্চান মেয়ে চোরের হাত থেকে তার ঘরের জিনিসপত্র রক্ষা করায় তিনি কৃতজ্ঞতা ও প্রকাশ করতে বলেননি।

ভারতবর্ষের শিক্ষিত অর্জিত জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন বাঙালি যুবক শ্রেণির প্রতিনিধি বলা যায় অপূর্বকে।

—--------------------------------------------------


[৮] বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে কিন্তুু শখ ষোল আনাই বজায় আছে। — বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এখানে বাবুটি হলেন গিরিশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশী সব্যসাচী মল্লিক-এর কথা বলা হয়েছে।

এখানে বর্মা অয়েল কম্পানি তেলের খনির কারখানার মিস্ত্রি গিরিশ মহাপাত্র চেহারার দিক থেকে যেমন রোগা তেমনি দুর্বল। কিন্তু তার সাজ পোশাক সৌখিনতা বিশেস ভাবে চোখে পড়ার মতো। তার মাথায় চেরা সিঁথি। রুক্ষ চুলের লেবুর তেল ঢেলেছেন অপর্যাপ্ত পরিমাণে। তার নিদারুণ গন্ধ। গায়ে তার জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুরিদার পাঞ্জাবি। এবং বুক পকেটে বাঘ আঁকা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। পরনে বিলাতি মিলের কালো, মকমল পারের সুক্ষ শাড়ি। বার্নিশ পড়া পাম্প শু। হাতে একগাছি হরিণের শিং এর হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি ইত্যাদি। অর্থাৎ সৌখিনতার দিক দিয়ে গিরিশ মহাপাত্র বাবুগোছের মানুষ বটে।

—----------------------------------------------------


[৯] এই জানোয়ারটিকে ওয়াচ করবার দরকার নেই বড়বাবু — কার উক্তি? এই উক্তির কারণ কি?


[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এই আলোচ্য উদ্ধৃতির বক্তা হলেন পুলিশ কর্মচারী জগদীশবাবু।

জগদীশ বাবু তথা গোটা পুলিশ বাহিনী বিপ্লবী পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক এর গতিবিধি নজর রাখতে ও গ্রেফতার করতে রেঙ্গুনে এসেছেন। রুচি ও মর্যাদার দিক থেকে সব্যসাচীর সঙ্গে সামান্য হলেও সাদৃশ্যযুক্ত ব্যক্তিকে ওয়াচ করা তাদের কর্তব্য। বর্মা অয়েল কোম্পানি তেলের খনির কারখানার মিস্ত্রী গিরিশ মহাপাত্র কে সবচেয়ে সন্দেহ করা হলেও তার সাজপোশাক, রুচি ইত্যাদির প্রবণতা যেমন হাস্যকর তেমনি বিরক্তকর। সাজপোশাকে সৌখিনতার পরিচয় দিতে গিয়ে গিরিশ মহাপাত্রের বিচিত্র গতি সম্পন্ন অদ্ভুত ধরনের এক হাস্যকর চিত্র হয়ে উঠেছেন। তার মাথার সামনের দিকে বড় বড় চুল ধার ও কানের দিকে নেই বললেই চলে। এবং চেরাসিটি। মাথায় লেবুর সুগন্ধযুক্ত তেল ঢেলেছেন। গায়ে তার জাপানি রঙ এর চুড়িদার পাঞ্জাবি ইত্যাদি।

মানুষটির পকেটে গাঁজার কলকে এবং হাতে গাঁজা। শরীরটাও গাঁজাখোরদের মত। তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও গাঁজা খাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। অন্যকে সেজে দেওয়ার জন্যই গাজার কল্কেটা সঙ্গে রেখেছেন। গিরিশ মহাপাত্রের এ হেন বিচিত্র সৌখিনতার অদ্ভুত মিথ্যা বলার প্রবণতায় এবং মাথায় লেবুর গন্ধ যুক্ত পুলিশ কর্মচারী জগদীশবাবু এমন মন্তব্য করেছে এখানে।

—--------------------------------------------------


[১০] যাকে খুঁজছেন তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন —- কার কালচারের কথা ভেবে দেখতে বলেছেন? কেনো তার কালচারের কথা ভাবতে বলা হয়েছে?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এখানে বাংলার বীর বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক-এর কালচারের কথা বলা হয়েছে।

নিমাই বাবু সামনে হাজির করা হলে দেখা গেল তিনি একজন বয়স ত্রিশ বত্রিশের রুগ্ন এবং অত্যন্ত দুর্বল ব্যক্তি। পোশাকের সৌখিনতার পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেকে হাস্যাস্পদ করে তুলেছেন। চেরা  সিঁথি, অপর্যাপ্ত পরিমাণে লেবুর তেল ঢেলেছেন মাথায়। এবং গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। যার বুক পকেটে একটি বাঘ আঁকা রুমাল। এবং হাঁটুর ওপরে লাল টিপে দিয়ে বাধা। হাতে হরিণের হাতল দেওয়া এক গাছি বেতের ছড়ি ইত্যাদি।

অসাধারণ পারদর্শী বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রে। তিনি উন্নত কালচারের একজন ব্যক্তি। এত বিরাট ভূমিকা সম্পন্ন একজন ব্যক্তির কালচারের সঙ্গে গিরিশ মহাপাত্রের কালচারের প্রভেদটা ভেবে দেখার মত। আবার এও হতে পারে যে অপূর্ব উদ্দেশ্য নিমাই বাবুকে ভুল পথে চালিত করতে গিয়ে ব্যবধানটিকেই বড় করে তুলেছেন।

—---------------------------------------------------


[১১] আমি কালই বার হয়ে যেতে পারি —- কে কোথায় যেতে চাইলেন? কেনো চাইলেন?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। উচ্চপদস্থ কর্মী অপূর্ব অফিসের কাজে রেঙ্গুন ছেড়ে ভামো যেতে চাইলেন।

বোথা কোম্পানির বড় সাহেব একটা টেলিগ্রাম নিয়ে অপূর্বের কাছে আসেন। কোম্পানির সমস্ত কার্যালয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। তাই বড় সাহেব চান সাহেব চান গোটা কোম্পানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অধিকারী অপূর্ব যেন আপাতত রেঙ্গুন ত্যাগ করে দেশের নানা প্রান্তে থাকা অফিসগুলিতে যান তিনি।

রেঙ্গুনের পরিবেশ সেই মুহূর্তে প্রতিকূল ছিল না অপূর্বের কাছে। কোম্পানির বিভিন্ন অফিসে যাওয়ার সূত্রের অপরিচিত বর্মা দেশ তাকে চাক্ষুষ দেখার একটা সুযোগ এসে পড়াই অপূর্ব অত্যন্ত আনন্দিত হন। এবং বড় সাহেব তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বোরখা কোম্পানির অফিসে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে অপূর্ব তা মেনে নেন। তাই বড় সাহেবের কতায় অপূর্বকে ভামো যেতে চেয়েছিলেন এই গদ্যাংশে।

—------------------------------------------------------


[১২] সেদিন কেবল তামাশা দেখতে গিয়েছিলাম — কে কোন দিন তামাশা দেখতে গিয়েছিলেন?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। অপূর্ব গিয়েছিলেন রেঙ্গুন পুলিশ স্টেশনে বাড়িতে চুরির অভিযোগ জানাতে।

সব্যসাচী ব্রিটিশ পুলিশকে নাস্তানুবাদ করেছিলেন বিপুলভাবে, যা তামাশা বলে মনে হয়েছিল অপূর্বের।

পরাধীন ভারতবর্ষের বিপ্লবীর হাত থেকে ব্রিটিশ রাজ কেউ উত্থান করার জন্য শিক্ষিত তরুণ সব্যসাচী মল্লিক ছিলেন অতি সক্রিয়। দারোগা নিমাইবাবুর জিজ্ঞাসা বাদে সময় সব্যসাচী অনায়াসে নিজেকে তেলের খনি শ্রমিক গিরিশ মহাপাত্র বলে পরিচয় দেন। এবং অতি সাধারণ চেহারা ও বিসদৃশ পোশাক পরিহিত সভ্যসাচী ওরফে গিরিশ অনায়াসে পুলিশকে ফাঁকি দেয়।

মাথায় উৎকট গন্ধযুক্ত তেলমাখা গিরিশকে অতি নিম্নশ্রেণীর মানুষ বলেই পুলিশ মনে করেন। এবং পুলিশ কর্মী জগদীশবাবু এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকার নেই।

সব্যসাচীর পুলিশ প্রশাসনকে নাস্তানাবুদ করার ঘটনা দেখেন । যে ব্রিটিশ পুলিশ বিশ্বজড়া ইংরেজ সাম্রাজ্যের অন্যতম গর্ভের বিষয় তাকেও গিরিশ মহাপাত্রের আপাত নিরীহ আচরণ ও সামঞ্জস্যহীন পোষাক পরিধানের মাধ্যমে সব্যসাচী প্রবল ভাবে নাস্তানাবুদ করে ।

—---------------------------------------------------


[১৩] বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে — বাবুটি কে? তার স্বাস্থ্যের বর্ণনা দাও?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এখানে গিরিশ মহাপাত্র কে রেঙ্গুন পুলিশ স্টেশনে পুলিশকর্তা নিমাই বাবুর সামনে উপস্থিত করানো হয়।

এিশ- বএিশ বছর বয়সী সব্যসাচীকে যখন আনা হয় তখন প্রবল কাশির অধিক্য লক্ষ্য করা গেলো। রোদে তামাটে হয়ে গেছে এবং কাশির প্রাবল্যে তিনি অত্যন্ত হাঁপিয়ে ওঠেন। এবং গিরিশকে দেখলে মনে হয় কি একটা দুরারোগ্য রোগ যেন তাকে প্রবাল ভাবে গ্রাস করতে চায়। শরীরের প্রবল ব্যতিক্রম হল তার উজ্জ্বল চোখগুলি। এবং গিরিশের উজ্জ্বল চোখ দৃষ্টি তার ক্ষীণ ও প্রাণশক্তিকে উপেক্ষা করে জীবনের আবেগকে যেন ব্যক্ত করে। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরিশ মহাপাত্র কে রেঙ্গুনে দেখে দারোগা নিমাই বাবু, অপূর্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন যে বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে। তাই এই গদ্যাংশে এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

—-----------------------------------------------------


[১৪] পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক কে নিমাই বাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল — পথের দাবী পাঠ্যাংশে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে কি জানা যায়? তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কি পরিস্থিতি তৈরি হয়?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এই গদ্যাংশে জানা যায়, সব্যসাচী সম্পর্কে গিরিশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশ তিনি রেঙ্গুনে উপস্থিত হয়েছেন সাধারণ শ্রমজীবী হিসাবে।

গিরিশ মহাপাত্রকে পুলিশের বড়কর্তা নিমাইবাবুর সামনে উপস্থিত করা হয়। এবং মানুষদের বিচিত্র পোশাক ও উপস্থিতি এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করে। গিরিশ মহাপাত্রের সামনের দিকে রয়েছে চুল এবং কানের দিকে চুল ছোটো করে কাটা। মাথায় চেরা সিঁথি ও সেখান থেকে লেবুর তেলের উৎকৎ গন্ধ। পরিধান রয়েছে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি । নিমাই বাবু গিরিশ মহাপাত্রের হাতে গঞ্জিকা সেবনের নির্দেশন দেখলেও সে গাজা খাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এবং বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল চোখের অধিকারী বছর এিশ - বএিশ গিরিশ মহাপাত্রের নির্গত লেবুর তেলের উৎপাত গন্ধে পুলিশের মাথা ধরে যায়।

—-----------------------------------------------------


[১৫] অপূর্ব চরিত্র চিত্রনে লেখকের দক্ষতার পরিচয় দাও?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এই রচনা অংশে আমরা দেখতে পাই অপূর্বের মধ্য অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো —


  1. আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি :- অপূর্বের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপাই আধুনিক মুক্ত দৃষ্টির কারণেই। এবং নিমাইবাবুর মতো আত্মীয় পুলিশ কর্মীরাও সেখানে তুচ্ছ।
  2. দেশ দেখার আশঙ্কা :- নতুন দেশ দেখার আশঙ্কায় অপূর্ব বাংলাদেশের পরিচিত আশ্রয় ত্যাগ করে বর্মায় আসেন। রেঙ্গুন থেকে আবার দেশের অন্যত্র যাবার সুযোগ পেলে আনন্দ গ্রহণ করেন।
  3. সৌজন্যবোধ :- ব্রিটিশ পুলিশের একান্ত সেবক নিমাই বাবুর বাহ্য আচরণের প্রতি অপূর্ব কখনোই অসৌজন্য দেখান না।
  4. গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা :- অপূর্ব প্রথম দর্শনেই গিরিশ মহাপাত্রের আড়ালে বিপ্লবী সব্যসাচী কে চিনতে পেরেছিলেন। পুলিশ যেখানে ব্যর্থ হয় সেখানে অপূর্ব এই দক্ষতা বিস্ময়কর।
  5. স্বাধীনচেতা মনোভাব :-- সব্যসাচী কে ধরার জন্য নিমাই বাবু তৎপরতা বা প্ল্যাটফর্মে ফিরিঙ্গি যুবকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়া তাকে স্থির থাকতে দেয় না।
  6. তীক্ষ্ণ বুদ্ধি :-- গিরিশ মহাপাত্রের আড়ালে এই সব্যসাচী কে চিনতে না পেরে অপূর্ব অত্যন্ত সক্রিয় হন। তাই দারোগার নিমাই বাবুকে অনায়াসে বলেন, "যাকে খুঁজছেন তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন "।

—------------------------------------------------------

[১৬] এত বড় কার্য কুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে হয়নি হে তলওয়ারকর — মেয়েটির কার্য কুশলতার পরিচয় দাও?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। অপূর্ব রেঙ্গুনের যে পাড়ায় ভাড়া নিয়েছিলেন সেখানে থাকার জন্য তার ওপরে এক ক্রিশ্চান মেয়ে ভাড়ায় ছিল। সেই পরিবারের মেয়ে ভারতীয় কার্যকৌশলতার কথা বলা হয়েছে।

চুরির উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিবেচনা করে চোর তালা ভেঙে অপূর্ব দের ঘরে ঢোকে। সে সময় সেই ভারতীয় মেয়েটি ওপর থেকে চুরি দৃশ্য দেখে চিৎকার করে জুড়ে দিলে চোর পালিয়ে যায়। এবং ভারতীয় নিজেদের একটি তালা দরজায় লাগিয়ে দেন। অফিসে প্রত্যাগত হয়ে অপূর্ব চুরি যাওয়া ও না যাওয়া জিনিসের তালিকা তৈরি করে দেয়। তারপর দেখা যায় সেই মহিলাটি এত নিখুঁত ও যথাযথ হয়েছিল যে অপূর্ব রামদাসের কাছে বিস্ময় গোপন করতে পারেননি। ভারতীয় এই বাস্তবতাবোধ ও বিপদকালের সঠিক কাজ করার সিদ্ধান্ত দেখে অপূর্ব তাকে কার্যকুশলা মেয়ে বলে অভিহিত করেন যথার্থভাবে।

—------------------------------------------------------


[১৭] কৈ এ ঘটনা আমাকে বলেননি —- ঘটনাটা কি?


[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। সুদীর্ঘকাল ধরে এ দেশ শ্বেতাঙ্গ ইংরেজদের পদানত ছিল। শাসক সম্প্রদায় পরাধীন এ দেশের মানুষদের প্রতি অত্যন্ত উন্নাসিক ধারণা পোষণ করতেন। বিনা কারণে এক দেশের অপমান করার মতো এক ধরনের আনন্দ তারা পেতেন।

নিজের দেশের প্ল্যাটফর্ম থেকে তৃষ্ণার্ত অপূর্বকে একদল বিকৃত রুচির দাম্ভিক ফিরিঙ্গি যুবক লাথি মেরে তাড়িয়ে দেয়। এবং অপূর্ব পরাধীন দেশের নাগরিক হওয়ায় অপূর্বকে ফিরিঙ্গি যুবকদের এই আচরণের মুখোমুখি হতে হয়। স্টেশনে এদেশীয়রা অনেক সংখ্যায় থাকলেও সুদীর্ঘ পরাধীনতার কারণে মানুষেরা কিছু মাত্র প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করার জন্য স্পেশাল মাস্টারের কাছে যান। ভারতীয় যুবক শ্বেতাঙ্গ বিরোধী কথা সেখানে গৃহীত হলো না তাকে কুকুরের মত তাড়িয়ে দেওয়া হল। এই ঘটনায় অপূর্বের মুখে অনেক পরে শোনেন তার সহকর্মী ব্রাহ্মণ রামদাস।

—---------------------------------------------------


[১৮] অপূর্ব তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরিয়া হাসি গোপন করিল —- অপূর্ব কে? তার হাসির এবং হাসি গোপন করার কারণ কী?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। অপূর্ব হলেন একজন শিক্ষিত বাঙালি যুবক। যিনি কাজের সূত্রে রেঙ্গুনে এসেছিলেন।

সব্যসাচীকে গ্রেফতারের সূত্র পুলিশ ইন্সপেক্টর নিমাই বাবু ও তার দলবল বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানায় কয়েকজন মিস্ত্রিকে আটকে রেখেছিলেন। তার মধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তি হলেন গিরিশ মহাপাত্র। কিন্তু তার সাজ পোশাকের সৌখিনতা বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। তার মাথার সামনের দিকে বড় বড় চুল। এবং কানের দিকে একেবারে নেই বললেই চলে। চেরা সিথি। জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। বুক পকেটে বাঘ আঁকা রুমাল। হাতে হরিণের সিং এর হাতল একগাছি বেতের ছড়ি ইত্যাদি। গিরিশ মহাপাত্রের সাজ পোশাকের এই অদ্ভুত সৌখিনতা অপূর্বের হাসির উদ্যোগ করেছিল।

—-----------------------------------------------------


[১৯] তিনি ঢের বেশি আমার আপনার —- বক্তা আপনার বলতে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন তা লেখো?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এই রচনা অংশটির বক্তা হলেন অপূর্ব।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বজুড়ে তাদের শক্তির জয় ঘোষণা করতে অকুণ্ঠিত ছিল। অন্যদিকে এদেশের স্বাধীনতা প্রিয় বিপ্লবী দেশকে মুক্ত করতে চেয়েছেন প্রাণের বিনিময়ে। সব্যসাচীর মত বিপ্লবীরা ব্যক্তিগত প্রাপ্তিকে তুচ্ছ করে স্বাধীনতার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। 
একদিকে সরকারি চাকুরে যারা, তাদের স্থির লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণ করা ভারতীয়দের নির্মমভাবে দমন করা। উন্নত রুচি ও শিক্ষার অধিকারী তরুণ বিপ্লবীর গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য রেঙ্গুনে আসা দারোগা নিমাই বাবুর প্রতি তাই প্রচ্ছন্ন বিরূপ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু যে সমস্ত বিপ্লবীরা প্রাণ দান করে দেশকে মুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা নেয় তাদের প্রতি তরুণ আদর্শবাদী অপূর্ব অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল। তাই সব্যসাচীর মতো বিপ্লবীদের অপূর্ব অনেক আপন মনে করেন স্বাধীন সত্তার কারণেই।

—---------------------------------------------------


[২০]  বুড়ো মানুষের কথাটা শুনো — বুড়ো মানুষকে? তিনি কি করেন? কাকে তিনি এ কথাগুলি বলেছিলেন? কি কথা শুনতে বলেছিলেন?


[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এখানে বুড়ো মানুষ বলতে দারোগা নিমাই বাবুর কথা বলা হয়েছে। এখানে বুড়ো মানুষ হলেন নিমাইবাবু, যিনি একজন পুলিশ কর্তা। নিমাইবাবু এই কথাগুলি বলেছিলেন নিজেকে গিরিশ মহাপাত্র বলে অভিহিত করা সব্যসাচীকে।

গাঁজা খায় কিনা তা নিমাই বাবু জানতে চাইলে গিরিশ বলেন যে তিনি গঞ্জিকা সেবন করেন না। পুলিশি জিজ্ঞাসা উত্তরে বলেন কয়েকটি কুড়িয়ে পেয়েছেন এবং অন্যের প্রয়োজনের কথা ভেবে তা রেখেছেন। নিমাইবাবু অবশ্য গিরিশের চেহারায় গাঁজা খাওয়ার সমস্ত লক্ষণ খুঁজে পেলে গিরিশ প্রবলভাবে তা অস্বীকার করে। এই অবস্থায় গাঁজা খেলে তার যে আরো বিপন্ন হবে তাতে তার সন্দেহ নেই। এ ধরনের নেশা দ্রুত আয়ু নিঃশেষে সহায়ক হয় বলে নিমাই বাবু গিরিশকে তা থেকে বিরত থাকার সৎ পরামর্শ দেন।

—---------------------------------------------------


[২১] গিরিশ মহাপাত্র চরিত্রটি এই রচনা অংশে কতটা বাস্তবসম্মত হয়েছে আলোচনা করো?

[উ] 'পথের দাবী' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। অত্যন্ত সাধারণ চেহারার অধিকারী সব্যসাচী বিদেশি শিক্ষার পাশাপাশি একাধিক ভাষায় সমান পারদর্শী। ব্রিটিশ রাজশক্তিকে উৎখাত করতে চাওয়া বিপ্লবী সব্যসাচী রেঙ্গুনে এসেছে শুনে দারোগা নিমাই বাবু অতি সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

সব্যসাচীকে তিনি নানা জিজ্ঞাসাবাদ করেও তাকে ধরতে পারেন না। তার সাধারণ চেহারা ও পোশাক নিয়ে নিজেকে গিরিশ মহাপাত্র বলে অভিহিত করে সহজেই পুলিশের সতর্ক দৃষ্টিকে ফাঁকি দেন তিনি।

তেলের খনির সাধারণ শ্রমিকের আড়ালে বহু বিদেশি উপাধীর অধিকারী মানুষটির দিন দেশেও তাকে সহজে সন্দেহ মুক্ত হতে সাহায্য করে। মাথায় ব্যবহার করা উৎকট তেলের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশকর্মী জগদীশ বাবু তাই বলেছিলেন যে তেলের গন্ধে গোটা থানাশুদ্ধ লোকের মাথা ধরিয়ে দিল ইত্যাদি।

থানায় বিসদৃশ পোষাক পরা গিরিশ মহাপাত্র কে দেখে অপূর্ব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার সব্যসাচী হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে নিমাইবাবুকে বলেছিলেন যাকে খুঁজছেন তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।

ঘটনাসূত্রে গিরিশ-এর উপদেশে স্নেহের ছোঁয়া পাওয়া যায়। দারোগা নিমাইবাবু যখন গিরিশকে যেতে বলেন তখন জগদীশ বাবুর কথায় সব্যসাচী লিখিত অভিনয় যথার্থ রূপ পায়। গিরিশ মহাপাত্রের রচনা অংশটি ফুটে উঠেছে এখানে।

—------------------------------------------------------



দশম শ্রেণির বাংলা অন্যান্য লেখা







-------------------------------
পিডিএফ লিঙ্ক নিচে
----------------------------




আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন

👇👇👇👇


Join Telegram

Join Facebook






-----------------------------------


-----------------------------------
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url