প্রাক আধুনিক বাংলাBA MA বাংলাবৈষ্ণব পদাবলি

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভাের, জ্ঞানদাস, পূর্বরাগ


Last Updated on : June 22, 2024

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভাের : প্রিয় শিক্ষার্থীরা, বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পদ ব্যাখ্যাসহ পোস্ট এখানে দেওয়া হলো। 

পদটি ভালোভাবে বোঝার জন্য শব্দার্থ, ব্যাখ্যা, আলোচনা সংযুক্ত করা হলো।

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভাের, জ্ঞানদাস, পূর্বরাগ


মূলপদ

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভাের।

প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মাের। 

হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মাের কান্দে। 

পরাণ পিরীতি লাগি থির নাহি বান্দে।।

সই কি আর বলিব। 

যে পণ কর‍্যাছি মনে সেই সে করিব।। 

রূপ দেখি হিয়ার আরতি নাহি টুটে। 

বলকি বলিতে পারি যত মনে উঠে।। 

দেখিতে যে সুখ উঠে কি বলিব তা। 

দশ পরশ লাগি আউলাইছে গা।। 

আরো পড়ুন :  মাধব বহুত মিনতি করি তোয়, বিদ্যাপতি, প্রার্থনা

হাসিতে খসিয়া পড়ে কত মধুধার। 

লহু লহু হাসে বন্ধু পিরীতির সার।। 

গুরু গরবিত মাঝে রহি সখী সঙ্গে। 

পুলকে পূরয়ে তনু শ্যাম পরসঙ্গে।। 

পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার। 

নয়নের ধারা মাের বহে অনিবার।। 

ঘরের সতেক ঘরে করে কানা কানি। 

জ্ঞান কহে লাজ ঘরে ভেজাই আগুনি।।


রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভাের পদটির আলােচনা

জ্ঞানদাস রচিত এটি পূর্বরাগের পদ। শ্রীকৃষ্ণের রূপদর্শন ও গুণকথা শ্রবণে রাধার মনে  কৃষ্ণের প্রতি অনুরাগ জন্মেছে। এখন নিবিড় সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর মন উৎসুক। রূপদর্শন ও স্বরূপ সন্ধানের অপূর্বতা এই আলেখ্যে ধরা পড়েছে। বস্তুত রাধার মনে কৃষ্ণের প্রতি যে আসক্তি জন্মেছে তা শুধু সাদামাটা ভাবনার স্তরে থাকতে চাইছে না। গাঢ় প্রেমের রীতিই তাে এইরূপ। আরও অধিকবার দর্শন ও স্পর্শনের জন্য রাধার মন এখন ব্যাকুল। কৃষ্ণরূপ দর্শনে রাধার হৃদয়ের আর্তি মেটে না। দেহমনে নিঃসীম সুখের দিব্য অনুভূতি। আবার প্রতিক্ষণে কৃষ্ণকে দর্শন ও স্পর্শনের জন্য দেহমন আকুলিত। এদিকে কৃষ্ণের হাসিতে কত মধুর ধারা ঝরে পড়ে। প্রভুর মৃদু হাসি যেন প্রেমের সার বিশেষ।

আরো পড়ুন :  কি কহব রে সখি আনন্দ ওর, বিদ্যাপতি, ভাব সম্মিলন

রাধা যখন গুরুজনদের মাঝখানে সঙ্গীদের সঙ্গে বিরাজ করেন তখন শ্যাম প্রসঙ্গ কানে আসামাত্র পুলকে তার দেহ পূর্ণ হয়। গুরুজন বা সঙ্গীদের কাছে যাতে ধরা না পড়েন, সেজন্য তা গােপন করবার বহুচেষ্টা করেন। কিন্তু আবেগের আতিশয্যে রাধার দুনয়ন থেকে অবিরল অশ্রুধারা ঝরতে থাকে। এর ফলে ঘরে উপস্থিত সব লােক কানাকানি করতে থাকে। কিন্তু কানুর প্রেমে দুঃসাহসিনী রাধার তাতে কিছু আসে যায় না। তিনি লজ্জার ঘরে আগুন দিয়েছেন। অর্থাৎ লজ্জা সংকোচ বিসর্জন দিয়েছেন।

আলােচ্য পদটিতে রূপনুরাগে মুগ্ধ বেপথুমান হৃদয়ানুভূতি অলংকার বর্জিত হয়েও শিল্পিত ভাষার বন্ধনে ধরা পড়েছে। লক্ষ করবার বিষয় যে, এখানে নিছক Sensuousness নয়, বিমুগ্ধ রোমান্টিক মনের পরতে পরতে জমা হওয়া মধুক্ষরা অভিজ্ঞতা জনিত উপলদ্ধি, দেহ মনের অনুতে অনুতে তির তির করে বয়ে চলা এক অনাবিল আবেগের নির্মল স্রোতধারা বহমান। শুধু আধ্যাত্মিকতা  নয়, মানবিক জীবন-প্রীতির কষ্টিপাথরেও এ পদটি আস্বাদ্যমান।

আরো পড়ুন :  এ সখি হামারি দুঃখের নাহি ওর, বিদ্যাপতি, মাথুর

কবি জ্ঞানদাস সম্পর্কে কিছু লেখা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!