BA MA বাংলা

রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব কবিতাকে শুধু বৈকুন্ঠের গান বলে স্বীকার করতে চাননি, ব্যাখ্যা করো


Last Updated on : June 6, 2024

প্রিয় শিক্ষার্থীরা,

আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো বৈষ্ণব পদাবলী থেকে প্রশ্নোত্তর ||  এগুলি পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

✅ Join Our Telegram Channel ✅




রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব কবিতাকে শুধু বৈকুন্ঠের গান বলে স্বীকার করতে চাননি, ব্যাখ্যা করো


রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব কবিতাকে শুধু বৈকুন্ঠের গান বলে স্বীকার করতে চাননি, ব্যাখ্যা করো

প্রাচীন এবং মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলী তুলনাতীত, বস্তুত প্রাগাধুনিক বাংলা সাহিত্যের বৈষ্ণব পদাবলী বিশ্ব-সাহিত্যের দরবারে অন্তর্ভুক্ত হবার মতই সাহিত্য। কিন্তু বিশেষভাবে পর্যালােচনা করলে দেখা যাবে বিশ্ব সাহিত্য গােষ্ঠীচেতনামূলক ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সাহিত্য। তা সত্ত্বেও এটি সর্বজন কর্তৃক স্বীকৃত। চৈতনাদেবের আবির্ভাব বাংলা দেশে তথা বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনের একটা বিশিষ্ট রূপ ও রীতির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রবক্তা। তাঁর প্রবর্তিত এই ধর্মদর্শনকে বলা হয় গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের মূলকথা — সত্য স্বরূপ ব্রহ্মা স্বহৃদয়ের লীলা আস্বাদন করার জন্য জীব সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু এই দ্বৈতভাব চিরস্থায়ী নয়—-জীবের সঙ্গে মিলিত হবার আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে নিয়ত বর্তমান।

রূপের মধ্যদিয়ে অপরূপের সাধনার ব্রতী ছিলেন বৈষ্ণব কবিগণ, সেকথা রবীন্দ্রনাথ সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন—

অসীমকে সীমার মধ্যে আনিয়া ভক্ত তাহাকে উপলব্ধি করিয়াছেন। আকাশ যেমন গুহের মধ্যে আবদ্ধ হইয়াও অসীম এবং আকাশই, সেইরূপ রাধাকৃষ্ণের মধ্যে পরিচ্ছিন্ন হইয়াও অসীম ব্রহ্মই আছেন। মানবমনে অসীমের সার্থকতা সীমাবধনে আসিয়া। তাহার মধ্যে আসিলেই অসীম প্রেমের বস্তু হয়, নতুবা প্রেমাস্পদ সম্ভব নয়-প্রেমের জন্য ব্যায়ামের কার্যবূপ ও রাধারুপের মধ্যে এই তত্ত্বই নিহিত।

অতএব বৈষ্ণব পদাবলীতে আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

আরো পড়ুন :  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাংলা অলংকারের মধ্যে পার্থক্য

বৈষ্ণব কবিতার লীলারস আধ্যাত্মিকতা মুক্ত হলেও নরদেহে সেইরস আস্বাদনের জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাধা ভাবযুক্ত শ্রীগৌরাঙ্গরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ। অতএব এখানে দেববাদ এবং অলৌকিকতা বর্জিত হয়ে অপ্রাকৃত প্রেম প্রকৃত প্রেমে তথা মানবীয় প্রেমে রপান্তরিত হয়েছে।

বৈষ্ণব পদাবলী মধুর রসের কাব্য। তাই এর মানবিক আবেদনে সার্বজনীনতার ভাব রয়েছে। তা কোথাও প্রচ্ছন্ন নয়। চৈতন্য পরবর্তী বৈষ্ণব সাহিত্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্যভাব একেবারে তিরােহিত নয়। ধর্মনিরপেক্ষতাই সকলের নিকট আদরনীয় করে তুলেছে বৈষ্ণব পদকে —

সই, কেবা শুনাইল শ্যাম নাম,
কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গাে।
আকুল করিল মাের প্রাণ।

প্রিয় বিরহে কাতর, প্রিয় নাম উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চুম্বকের মতই কানের ভিতর দিয়ে মর্মে প্রবেশ করে। এ বােঝার জন্য বৈষ্ণব হবার প্রয়ােজন নেই।

আমরা বৈষ্ণব পদাবলীর মধ্যে একদিকে যেমন আধ্যাত্মিকতার পরিচয় পেয়েছি তেমনি ধর্মনিরপেক্ষতার আবেদনও পাই। কিন্তু তৎসত্ত্বেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়- -বৈষ্ণব পদাবলী একধরনের গীতি কবিতা—ব্যক্তি হৃদয়ের অনুভূতি থেকেই এর উদ্ভব সম্ভবপর। অথচ গােষ্ঠী চেতনায় উদ্বুদ্ধ বৈষ্ণব কবিদের দ্বারা এর রচনা কীভাবে সম্ভব হল প্রশ্নটা তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর ‘সােনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের ‘বৈষ্ণব কবিতা’ নামক কবিতাটির প্রথম পংক্তিতে প্রশ্ন করেছেন- ‘শুধু বৈকুণ্ঠের তরে বৈষ্ণবের গান!’

আরো পড়ুন :  আমার শপতি লাগে না ধাইও ধেনুর আগে, যাদবেন্দ্র, বাল্যলীলা
এখানে তিনি আধ্যাত্মিক দিকটি স্বীকার করে নিয়েই প্রশ্ন করেছেন। শুধু কি তাই, আর কিছু নয় ? 
তবে কেন শুনি সেই সুর/সহসা দেখিতে পাই দ্বিগুণ মধুর/মধ্যপথে নরনারী/অক্ষয় সে সুধারাশি করি কাড়াকাড়ি। লইতেছে আপনার প্রিয়গৃহ তরে— সাম্প্রদায়িক গােষ্ঠী চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবিতায় কোনও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ছোঁয়া না থাকলেও অপর ব্যক্তি হয়ে এমন করে আগুন জ্বালায় কী করে। কবি সার্বোভৌম রবীন্দ্রনাথের চেয়ে এ সত্যকে অনুভব করার ক্ষমতা এযুগে আর কারাে থাকা সম্ভব নয়।

এরপর কবির প্রশ্ন, বৈষ্ণব কবিগণ যে মন্ত্রে দীক্ষালাভ করেছিলেন কোথায়, কার কাছ থেকে ?

সত্য করি কহ মােরে হে বৈষ্ণব কবি,
কোথা তুমি পেয়েছিলে এই প্রেমচ্ছবি,

তিনি স্পষ্ট অনুভব করেছিলেন, ব্যক্তিগত প্রেমের অনুভূতি থেকেই বৈষ্ণব পদগুলাে রচিত হয়েছে। আধ্যাত্মিকতা এর উপর আরােপিত এবং এইজন্য বৈষ্ণব তত্ত্বেও মানসিকতার আধারটুকু অটুট রাখা হয়েছে। বৈষ্ণবীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিচারেও বৈষ্ণব পদাবলীর রাধা ‘ছায়া সহচরী মানবী নারীকে একেবারে পরিত্যাগ করিতে পারে নাই ; কায়া ও ছায়া অধিবন্ধভাবে একটা মিশ্ররূপের সৃষ্টি করিয়াছে।’

আরো পড়ুন :  বঁধু কি আর বলিব আমি, চণ্ডীদাস, নিবেদন

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আপনার প্রেমাস্বাদনের জন্য শ্রীরাধার সৃষ্টি করেছিলেন। এটি বৈষ্ণব তত্ত্বের কথা। তাহলে ভগবান তাঁর সৃষ্ট নর-নারীর প্রেমােৎসবে আত্মপ্রেম লীলার প্রতিচ্ছবি দেখে শুদ্ধ হবেন কেন? পদাবলীর সুমধুর স্বীয় প্রেমধারা ভক্তরা বৈকুণ্ঠের পথে পরিচালিত করুন আপত্তি নেই। তবে সে ধারা যখন এই পৃথিবীর পথ ধরে বৈকুণ্ঠ চলেছে, তখন চির প্রেম-তৃষিত নরনারী সে অমিয়ধারা থেকে আপন আপন প্রেম তৃষ্ণা মিটিয়ে নিলে আপত্তির কারণ থাকতে পারেনা।

আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন




————————————————————-

File Name : 


File Format : 

File Language : 

File Location : 

Download Link :  

————————————————————-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!