বাগধারা
বাগধারা :
বাগধারা
[১] অকালকুষ্মাণ্ড (অপদার্থ)
না বাপু, তোমার মতো অকালকুষ্মাণ্ডকে দিয়ে এমন অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ হবে না।
[২] অক্কা পাওয়া বা পটোল তোলা (মরে যাওয়া – লঘু অর্থে)
পালের গোদাটা যে কবে অক্কা পাবে, গেরামের হাড় জুডুবে।
[৩] অগ্নিপরীক্ষা (নিদারুণ দুঃসময়ের মধ্য দিয়া কাল কাটানো)
ভারতবাসীর এখন অগ্নিপরীক্ষা চলছে, এ-সময় সকলপ্রকার ভেদবুদ্ধির কথা ভুলে সকলকে জাতীয়-সংহতির জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
[৪] অন্ধের যষ্টি বা অন্ধের নড়ি (অসহায়ের শেষ সম্বল)
বেড়ালছানাগুলিই নিঃসন্তান বৃদ্ধার শেষবয়সে অন্ধের যষ্টি হয়ে রয়েছে।
[৫] অকূল পাথার (সমূহ বিপদ)
হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় অপোগণ্ড ভাইগুলোকে নিয়ে সমীর অকূল পাথারে পড়ল।
[৬] অকূলে কূল পাওয়া (বিপন্মুক্ত হওয়া)
সদ্যপ্রয়াত মণিবাবুর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটা আসতে তবে না ওঁর ছেলেমেয়েরা অকূলে কূল পেল।
[৭] অপ্রস্তুতে পড়া (অপ্রতিভ হওয়া)
সকাল সাতটার ট্রেন যখন বারোটায় পৌঁছল, তখন রামবাবুর বাড়িতে গেলে ওঁরা অপ্রস্তুতে পড়বেন ভেবে সোজা হোটেলের দিকেই পা বাড়ালাম।
[৮] অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন)
পররাজ্য-লোলুপের কাছে পঞ্চশীলের মাহাত্ম্য-ব্যাখ্যা অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছু নয়।
[৯] অমাবস্যার চাঁদ বা ডুমুরের ফুল (দুর্লভদর্শন)
নাটকের মহড়া দিতে সবাই আসছে, বাবলুরই কেবল পাত্তা নেই; ও অমাবস্যার চাঁদ হয়ে উঠল নাকি?
[১০] অগস্ত্যযাত্রা (শেষ যাত্রা)
কেনারাম কোন্ সকালে কেরোসিন তেলের লাইন দিয়েছে, এখনও এল না—ও কি অগস্ত্যযাত্রা করল?
[১১] অহিনকুল সম্বন্ধ বা আদায়-কাঁচকলায় বা সাপে-নেউলে (ঘোর শত্রুতা)
বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে দুই ভায়ের এখন অহিনকুল সম্বন্ধ, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই।
বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে দুই ভায়ের এখন আদায়-কাঁচকলায় সম্বন্ধ, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই।
বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে দুই ভায়ের এখন সাপে-নেউলে সম্বন্ধ, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই।
[১২] অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া (সঠিক পথ না জানায় আন্দাজে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা)
প্রতিটি প্রশ্নের প্রয়োগ পদ্ধতি না জেনে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লে কেবল নির্বুদ্ধিতারই পরিচয় দেওয়া হয়।
[১৩] অন্নচিন্তা চমৎকারা (পেটের চিন্তাতেই অস্থির)
কঠোর দারিদ্র্যের কবলে পড়ে অন্নচিন্তা যাদের চমৎকারা, তাদের কাছে শিক্ষাসংস্কৃতির ছিটেফোঁটাও আশা করা যায় কি?
[১৪] অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী বা ফোঁপরা ঢেঁকির চোপরা বেশী (অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তির বাহ্য চালচলনে অহংকারের মাত্রাধিক প্রকাশ)
রবীন্দ্রনাট্য-সম্বন্ধে তোমার এ প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে ভেবেচিন্তে দিতে হবে, অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীদের দলে আমি নেই।
[১৫] আকাশ থেকে পড়া (অত্যধিক বিস্মিত হওয়া)
আসন্ন দুর্যোগ উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরবই শুনে পিসিমা তো আকাশ থেকে পড়লেন।
[১৬] আলোর নীচেই অন্ধকার (আদর্শের পাশেই আদর্শহীনতার অবস্থান)
প্রধানশিক্ষকের ছেলেটিই তো সেদিন পরীক্ষা পণ্ড করার নেতৃত্ব দিল, একেই তো বলে আলোর নীচেই অন্ধকার।
[১৭] আঁস্তাকুড়ের পাতা (হেয় ব্যক্তি)
আমরা হলুম গিয়ে আঁস্তাকুড়ের পাতা, আপনাদের ভোট দিয়ে আমরা কখনও স্বর্গে যেতে পারি?
[১৮] আহ্লাদে আটখানা (অত্যধিক পুলকিত)
মামার দেওয়া টিনের উড়োজাহাজটা পেয়ে পাপিয়া একেবারে আহ্লাদে আটখানা।
[১৯] আকাশকুসুম বা শূন্যে সৌধনির্মাণ (অবাস্তব সুখকল্পনা)
স্কুলমাস্টারি করে খাস শহরের বুকে একখানা বাড়ি তৈরি করার চিন্তা আকাশকুসুম বইকি।
[২০] আক্কেল-গুড়ুম (হতবুদ্ধিতা)
দুশো টাকা ইলেকট্রিক বিলের জায়গায় পাঁচহাজার টাকার বিল আসতে দেখে আমার তো আক্কেলগুড়ুম।
[২১] আক্কেল-সেলামি (অনভিজ্ঞতার দণ্ড)
ভাগে কারবার করতে গিয়ে আপনাকে কয়েক হাজার টাকা আক্কেল-সেলামি দিতে হয়েছে তাহলে!
[২২] আদাজল খেয়ে লাগা বা কোমর বেঁধে লাগা বা উঠে-পড়ে লাগা (অত্যধিক উদ্যম-সহকারে কাজ করা)
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আমাদের হাবুল সাফল্যলাভের উদ্দেশ্যে এবার আদাজল খেয়ে লেগেছে।
[২৩] আমড়াকাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ)
আগে তো বেশ কাজকর্ম করছিলে, দিনের দিন এমন আমড়াকাঠের ঢেঁকি হয়ে উঠছো কেন?
[২৪] আকাশে তোলা (অত্যধিক প্রশংসা করা)
প্রথম সাফল্যের ফলে সফলকাম ব্যক্তিকে একেবারে আকাশে তোলা উচিত নয়, মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।
[২৫] আড়িপাতা (অন্তরালে থেকে কোনোকিছু শোনার চেষ্টা)
একটু নীচু গলায় বল, নতুন চাকরটার আড়িপাতা অভ্যাস আছে, তাই একটু সতর্ক থাকা দরকার।
[২৬] আপ ভালো তো জগৎ ভালো (নিজে ভালো হলে সকলকেই ভালো লাগে)
স্বার্থপরের কাছে সমস্ত মানুষই ঘোর স্বার্থপর; অথচ সাদা চোখে দেখলে জগৎটাই চমৎকার দেখায়; তাই তো শুনতে পাই—আপ ভালো তো জগৎ ভালো।
[২৭] আমতা-আমতা করা (স্পষ্ট করে না বলা)
উকিলের জেরার মুখে সাজানো সাক্ষী শেষে আমতা-আমতা করতে লাগল।
[২৮] আকাশপাতাল প্রভেদ বা আসমান-জমিন ফারাক (বিরাট পার্থক্য)
স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতায় আকাশপাতাল প্রভেদ।
[২৯] আসর জাঁকানো (ভাবভঙ্গী ও কথাবার্তায় সমবেত ব্যক্তিদের মধ্যে নিজেকে বিশিষ্টরূপে জাহির করা)
আশিসবাবু আসাম-ভ্রমণের আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে একেবারে আসর জাঁকিয়ে বসেছেন।
[৩০] আষাঢ়ে গল্প (দীর্ঘ বিরক্তিকর কাহিনী)
ওসব আষাঢ়ে গল্প রেখে কাজের কাজ কিছু কর, যাতে দুটো পয়সা পকেটে আসে।
[৩১] আঙুল ফুলে কলাগাছ (হঠাৎ অবস্থার উন্নতি বা বিরাট পদোন্নতি)
কর্তৃপক্ষের নেকনজরে পড়ে কৃষ্ণগতিবাবু এখন সুপারভাইজার হয়ে হম্বিতম্বি করছেন, অথচ পাঁচ বছর আগে উনি আমাদেরই মতো করণিক ছিলেন—আঙুল ফুলে কলাগাছ তো একেই বলে।
[৩২] ইঁচড়ে পাকা (অকালপক্ক)
আচ্ছা ইঁচড়ে পাকা ছেলে তো; বড়োদের সামনে এইভাবে রসিকতা করে?
[৩৩] উঁকি দেওয়া (অলক্ষ্যে দেখার চেষ্টা)
কাঞ্চনকৌলীন্যপূর্ণ সমাজে বাস করে লটারির টাকায় ভাগ্য ফেরাবার ইচ্ছেটা মাঝে মাঝে মনে উঁকি দেয় বইকি।
[৩৪] উত্তম-মধ্যম (প্রচণ্ড প্রহার)
পকেটমারকে পুলিশে দেওয়ার চেয়ে আচ্ছা করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দাও।
[৩৫] উচ্ছের ঝাড় (কুখ্যাত বংশ)
ওর বাবা ছিল ডাকাতের সর্দার, ভাইগুলোর কেউ পকেটমার তো কেউ দাঙ্গাবাজ; আর ও হয়েছে ছিঁচকে চোর—আশ্চর্য হবার কিছু নেই, উচ্ছের ঝাড় তো।
[৩৬] উলুবনে মুক্তো ছড়ানো (অপাত্রে দান)
কচিকাঁচাদের কাছে রবীন্দ্র-জীবনদর্শন ব্যাখ্যা করা আর উলুবনে মুক্তো ছড়ানো একই—কোনোটাই কাজে লাগে না।
[৩৭] উভয়সঙ্কট (দু দিকেই মহাবিপদ)
মামা বলেন কারবার দেখতে, বাবা মোটা টাকার চাকরি ছাড়তে বারণ করেন—কোন্ দিক্ রাখি। আমার হয়েছে উভয়সঙ্কট।
[৩৮] একচোখো (পক্ষপাতদুষ্ট)
শিক্ষকের পক্ষে একচোখো নীতি অবলম্বন কখনই উচিত নয়, তাঁকে সমদর্শী হতে হবে।
[৩৯] এক যাত্রায় পৃথক ফল (একইরকম ভালো কাজ করে সমান ফল না পাওয়া)
শ্রেণীর প্রথম ছাত্রটি আর নতুন ভরতি-হওয়া ছাত্রটি দুজনেই জ্যামিতির শক্ত সম্পাদ্যটি একইরকম লিখেছে, অথচ নম্বরের দিক্ দিয়ে বেশ হেরফের হয়ে গেছে; এক যাত্রায় পৃথক্ ফল একেই বলে।
[৪০] একহাত নেওয়া (প্রতিশোধ গ্রহণ)
এতদিন বহু বঞ্চনা সত্ত্বেও চুপচাপ থেকে বাঞ্ছারাম এবারে খুড়োর ওপর বেশ একহাত নিয়েছে।
[৪১] এসপার-ওসপার (ভালোমন্দ একটা কিছুর চরম নিষ্পত্তি)
নিত্যদিন এমন ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়? তাই সবাই চাইছেন একটা কিছু এসপার-ওসপার হয়েই যাক।
[৪২] ওজন বুঝে চলা (ক্ষমতামতো কাজ করা)
পাড়ার পাঁচজনের কথায় নির্বোধের মতো না নেচে, নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা অনুসারে ওজন বুঝে চলবে; তাহলে আর বিপদে পড়তে হবে না।
চলবে…..