প্রাক আধুনিক বাংলাBA MA বাংলাবৈষ্ণব পদাবলি

বঁধু তুমি সে আমার প্রাণ, চণ্ডীদাস, নিবেদন পর্যায়


Last Updated on : June 14, 2024

বঁধু তুমি সে আমার প্রাণ : প্রিয় শিক্ষার্থীরা, বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পদ ব্যাখ্যাসহ পোস্ট এখানে দেওয়া হলো। 

বঁধু তুমি সে আমার প্রাণ, চণ্ডীদাস, নিবেদন পর্যায়


মূল পদ

বঁধু তুমি সে আমার প্রাণ।

দেহ মন আদি     তোমারে সপেঁছি

কুলশীল জাতি মান।।

অখিলের নাথ     তুমি হে কালিয়া

যোগীর আরাধ্য ধন।।

গোপ গোয়ালিনী     হাম অতি হীনা

না জানি ভজন পূজন।।

পিরীতি রসেতে     ঢালি তনুমন

দিয়াছি তোমার পায়।

তুমি মোর পতি     তুমি মোর গতি

মনে নাহি আন ভায়।।

কলঙ্কী বলিয়া     ডাকে সব লোকে

তাহাতে নাহিক দুঃখ।

আরো পড়ুন :  নীরদ নয়নে নীরঘন সিঞ্চনে, গোবিন্দদাস, গৌরাঙ্গবিষয়ক পদ

তোমার লাগিয়া     কলঙ্কের হার

গলায় পরিতে সুখ।।

সতী বা অসতী     তোমাতে বিদিত

ভাল মন্দ নাহি জানি।

কহে চণ্ডীদাস     পাপ পুণ্য সম

তোমারি চরণ খানি।।


বঁধু তুমি সে আমার প্রাণ পদ আলোচনা 

চণ্ডীদাসের ‘নিবেদন’ পর্যায়ের এই পদটিতেও শ্রীরাধার পরিপূর্ণ আত্মনিবেদনের সুর ধ্বনিত হয়েছে। পরম বাঞ্ছিত প্রিয়তম কৃষ্ণকে সর্বস্ব অর্পণের মধ্যদিয়ে চরমতম আনন্দ লাভ করা যায়। রাগাত্মিকা ভক্তিসাধিকা শ্রীমতী সেটা উপলব্ধি করেছেন। কৃষ্ণই তাঁর প্রাণের প্রাণ। কৃষ্ণকে তাই তিনি দেহ-মন, কুল-শীল, জাত-মান-সবকিছু সমর্পণ করে ধন্য হতে চান। রাধার এ বোধ আছে যে, কৃষ্ণ জগন্নাথ-তিনি এ নিখিল বিশ্বের প্রভু, সে হিসেবে রাধারও। কিন্তু রাধা তো অতি সামান্য গোপনারী—জগন্নাথের যথাযোগ্য ভজন পূজন মন্ত্র বা উপাচার কিছুই তাঁর সংগ্রহে নেই। তিনি শুধু প্রেম ভালোবাসার মন্ত্রে কালিয়ানাগরকে অভ্যর্থনা করতে চান। রাধার কৃষ্ণেই মতি, কৃষ্ণেই গতি। তাঁর মনে আর অন্য কোনও কারো চিন্তা নেই। এই কৃষ্ণ-অনুরক্তির জন্য সংসার-সমাজ রাধাকে কলঙ্কিনী বলে আখ্যাত করেছে। কিন্তু তাতে তাঁর কোনও দুঃখ নেই। কারণ, “প্রেম মহাধন’। কৃষ্ণও মাধ্যুর্যরস করা আস্বাদান।।” সেই কৃষ্ণকে ভালোবাসাতেই রাধার চরম সার্থকতা, চরম সুখ। সুতরাং তিনি সতী না অসতী—তা কৃষ্ণই ভালো জানেন। রাধা এ ব্যাপারে ভালো জানেন না। তিনি শুধু জানেন- “তোহারি চরণ খানি।”

আরো পড়ুন :  পিয়া যব আওব এ মুঝ গেহে, বিদ্যাপতি, ভাবোল্লাস (ভাব সম্মিলন)

পদটিতে অতি সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষায়, অতি গভীর সুরে শ্রীরাধার সুগভীর কৃষ্ণপ্রীতি এবং কৃষ্ণপদে আত্মসমর্পণের ভাবটি সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় যে, কৃষ্ণের যে ঐশ্বর্যভাবের কথা বলা হয়েছে, সেটাই এখানে প্রধান হয়ে ওঠেনি, বরং ঐশ্বর্যবোধকে অতিক্রম করে মাধুর্যভাবের পরম পরাকাষ্ঠা এখানে উদাহৃত হয়েছে। সুতরাং পদটি বৈষ্ণব ভাবনায়ও নিঃসন্দেহে বরণীয়।


কবি চণ্ডীদাস সম্পর্কে লেখা দেখুন

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!