BA MA বাংলাপ্রাক আধুনিক বাংলাবৈষ্ণব পদাবলি

নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী, বিদ্যাপতি, পূর্বরাগ


নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী : প্রিয় শিক্ষার্থীরা, বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পদ ব্যাখ্যাসহ পোস্ট এখানে দেওয়া হলো।

মূলপদসহ পদের অর্থ, টীকা, ব্যাখ্যা ও সামগ্রিক অর্থ দেওয়া হলো। পদটি কোন পর্যায়ের সেটিও উল্লিখিত হল।

নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী, বিদ্যাপতি, পূর্বরাগ


মূলপদ

নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী

সমুখে হেরল বর কান।

গুরুজন সঙ্গে লাজে ধনি নতমুখী 

কৈসনে হেরব বয়ান।।

সখি হে, অপরূপ চাতুরী গোরী। 

সব জন তেজি অগুসরি সঞ্চরি 

আড় বদন তঁহি ফেরি।।

তঁহি পুন মোতি-হার তোড়ি ফেকল

কহত হার টুটি গেল।

সব জন এক এক চুনি সঞ্চরু

-------------------------------------------------------
-------------------------------------------------------


-------------------------------------------------------
-------------------------------------------------------

শ্যাম-দরশ ধনি লেল।।

নয়ন-চকোর কাহ্ন-মুখ-শশিবর

কএল অমিয়-রস-পান।

দুহুঁ দুহুঁ দরশনে রসহু পসারল 

কবি বিদ্যাপতি ভান।।


পূর্বসূত্র

পদটি বিদ্যাপতির পূর্বরাগ পর্যায়ের। দর্শনজাত পূর্বরাগ। চতুরা রাধিকার কৃষ্ণদর্শন কীভাবে সফল হলো তার পরিচয় বিধৃত হয়েছে এই পদটিতে। যদিও উভয়ের পারস্পরিক দর্শনজাত পূর্বরাগের কথাও এখানে উল্লিখিত। 

আরো পড়ুন :  তাতল সৈকত বারি বিন্দুসম, বিদ্যাপতি, নিবেদন

নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী পদটির শব্দার্থ

নহাই = স্নান করে।

রাই = রাধা। 

বর = বরণীয়। 

কান = কানু, কৃষ্ণ।

ধনি = নারী, রমনী।

কৈসনে = কীভাবে। 

হেরব = দেখব।

বয়ান = বদন, মুখ। 

গোরী = গৌরবর্ণা রাধা। 

তেজি = ত্যাগ করে, ছাড়িয়ে গিয়ে। 

অগুসরি = আগিয়ে গিয়ে। 

আড় = কটাক্ষ, তির্যক।

তহিঁ = <তস্মিন্‌; তাতে, তাঁর প্রতি

তোড়ি = ছিঁড়ে। 

ফেকল = ফেলে দিল। 

টুটি = ছেঁড়া

চুনি = চয়ন করা, কুড়িয়ে নেওয়া। 

সঞ্চরু = এদিকে ওদিকে ঘুরতে লাগল। 

শ্যাম-দরশ = শ্যাম দর্শন

চকোর = বিশেষ পক্ষী

কাহ্ন = কৃষ্ণ

কএল = করল

অমিয় = অমৃত

দুহুঁ = দু’জনে

পসারল = প্রসারিত হল, বেড়ে গেল।

নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী পদটির ব্যাখ্যা-টীকা

নহাই উঠল তীরে … হেরল বর কান : কমলমুখী শ্রীরাধিকা স্নানান্তে তীরে উঠে সম্মুখেই কানুর দেখা পেলেন, যিনি কিনা তাঁর কাছে বরণীয়, আকাঙ্ক্ষিত। 

গুরুজন সঙ্গে … হেরব বয়ান : কিন্তু কীভাবে প্রেমিককে দেখবেন, সঙ্গে যে গুরুজন উপস্থিত। তাই নতমুখে শ্রীরাধা লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করলেন।

আরো পড়ুন :  বাংলা ভাষাতত্ত্ব ও বাংলা ব্যাকরণ বই pdf download

সখি হে … তহিঁ ফেরি : ওহে সখি, রাধিকা বোকা নন, তিনি চাতুরী জানেন। কী করলেন, না সঙ্গীদের ফেলে রেখে এগিয়ে গেলেন। আড়চোখে কিংবা ঘাড় কাত করে মুখ ফিরিয়ে দেখে নিলেন দয়িতকে।

তহিঁ পুন … ধনি লেল : একবার দেখেই কি কৃষ্ণদর্শন তৃপ্তি আসে ! পুনরায় দেখবার বাসনায় এক অভিনব পন্থা নিলেন শ্রীমতী। গলার মোতি-হার ইচ্ছা করেই ছিঁড়ে ফেলে দিলেন; বললেন—হার যে ছিঁড়ে গেল ! তখন এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়া মুক্তো কুড়িয়ে নিতে শুরু করলো সঙ্গীরা। এই সেই মোক্ষম সময়, সকলেই মুক্তো কুড়োতে কিংবা মালা গাঁথতে ব্যস্ত। সুন্দরী ধনি শ্যাম-দর্শনে মনবাসনা পূরণ করলেন।  

নয়ন-চকোর … বিদ্যাপতি ভান : শ্রীরাধিকার নয়ন-চকোর কৃষ্ণের মুখশশী-কিরণ পান করে তৃপ্ত হলো। কবি বিদ্যাপতি বলছেন, এতে করে উভয় উভয়ের দর্শনে প্রেম আরো প্রসারিত হল। 

নহাই উঠল তীরে রাই কমলমুখী পদটির ভাষ্য

এটি বিদ্যাপতির নামে প্রচলিত পরিচিত পূর্বরাগের পদ। বিদ্যাপতি রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মাত্রা দিয়েছেন, তা অন্য কবির কাব্যে পাওয়া যায় না। বিদ্যাপতির অধিকাংশ পদে যে বৈদগ্ধ্য, যে চাতুর্য, যে ছলাকলার বিস্তার, যে মনস্তত্ত্ব নিপুণতা দেখা যায় তা তাঁর রাধাকে এক অনন্য রসমূর্তি দিয়েছে। তার দুটি কারণ। বিদ্যাপতি নাগরিক কবি এবং রাজসভার কবি। তাঁর জীবনের এই দুই বিশিষ্ট অবস্থান তাঁর কবিদৃষ্টিতে স্বাতন্ত্র্য এনেছে, যার একটি প্রধান লক্ষণ জীবন-রস-সম্ভোগ। আর একটি বড় কারণ, বিদ্যাপতি বৈষ্ণব ছিলেন না। সেইজন্য কাব্যসাধনা রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে অবলম্বন করে তাঁর কাছে মূলত সৌন্দর্যসাধনার উপায় হয়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন :  অঙ্কুর তপন তাপে যদি জারব, বিদ্যাপতি, মাথুর

বিদ্যাপতি সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা দেখুন


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!